সৌরভ মাজি, বর্ধমান: তথাকথিত তাবড় নেতা যাঁদের না কি মাটিতেই পা পড়ত না, হাওয়ায় উড়ে চলার অভ্যেস ছিল, সেই নেতাদের কার্যত বাস্তবের রুক্ষ জমিতে নামতে বাধ্য করেছে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি। মাটিতে পা দিয়ে হাঁটাতে শুরু করেছে। কে কত বড় নেতা -জনপ্রতিনিধি তা ভুলে গিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছের লোক হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা শুরু হয়েছে এই কর্মসূচিতে। চারচাকা গাড়ি ছাড়া যিনি ঘুরতেন না, তিনিও জলকাদায় ভরা জমিতে নেমে খেতমজুরদের সঙ্গে ধান রোপণ করছেন।
‘দিদিকে বলো’ জনসংযোগ কর্মসূচিতে বুধবার পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমান-১ ব্লকে এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। বর্ধমান উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নিশীথ মালিক কেতাদূরস্ত পাজামা-পাঞ্জাবি ও জহর কোট ছেড়ে লুঙ্গি পরে, কোমরে গামছা বেঁধে ধানজমিতে নেমে পড়েন দিনমজুরদের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জমিতে ধানের চারা রোপণ করলেন। কাদা মেখে, ঘাম ঝরিয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারের এই মানুষদের কাছের লোক হওয়ার চেষ্টা করলেন। বিধায়ককে এইভাবে জলকাদায় ভরা জমিতে নেমে একসঙ্গে ধান রুইতে দেখে খেতমজুরদের মুখেও যেন হাসি ফুটেছে। সেটা কাছের মানুষকে কাছে পাওয়ার না কি অন্য কিছু তা অবশ্য স্পষ্ট নয় ঠোঁটের ফাঁকের সেই হাসিতে।
তবে বিধায়ক জানাচ্ছেন, তাঁকে ওইভাবে কাছে পেয়ে আপ্লুত হয়ে গিয়েছেন খেতমজুররা। বিধায়কের কথায়, “ওইসব মানুষজন কল্পনাই করতে পারেন না একজন বিধায়ক তাঁদের সঙ্গে জমিতে নেমে ধান রুইতে পারে। আমরাও যে তাঁদেরও মতো সেটা বুঝেছেন খেতমজুররা। তাঁরা আমাকে বলেওছেন এইভাবে কোনও বিধায়ক কোনওদিন পাশে থাকেনি।” বিধায়ক জানান, তিনিও চাষির ছেলে। এখন বিধায়ক হলেও মাটির টান কোনওদিনই ভোলার নয়। মাটির সঙ্গে তো আত্মিক সম্পর্ক।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জনসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় দলীয় নেতা-কর্মীরা তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক এদিন শক্তিগড়ে বৈঠক করে। কবে কোথায়, কীভাবে জনসংযোগ কর্মসূচি করবে তা জানান। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে হাটগোবিন্দপুর পঞ্চায়েতের রামনগরের মাঠের ধারে হঠাৎ গাড়ি দাঁড় করান। নেমে পড়েন। পাশের এক কর্মীর বাড়ি থেকে লুঙ্গি-গামছা আনান। তার পর স্যান্ডো গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরে নেমে পড়েন ধান জমিতে।
এদিন বিধায়ক যাঁদের সঙ্গে ধান রোপণ করেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন শেফালি কোঁড়া। তিনি জানান, এর আগেও নিশীথবাবু তাঁদের সঙ্গে ১০০ দিনের কাজে মাটি কেটেছেন। মাঝে কিছুদিন সেভাবে কাছে পেতেন না। এদিন তাঁদের সঙ্গে জমিতে ধান রোপণ করেছেন। আর এক খেতমজুর জিতেন কোঁড়া জানান, গাড়ি নিয়েই চলে যেতেন আগে। সেভাবে তাঁদের সঙ্গে মিশতেন না বিধায়ক। কিন্তু এদিনের ঘটনার পরে তাঁদের মনে হয়েছে বিধায়ক খুবই কাছের মানুষ। বিধায়ক বলেন, “দিদি নির্দেশ দিয়েছেন সমাজের সকলস্তরের সব মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। তাঁদের অভাব-অভিযোগ শুনতে হবে। সেটাই করার চেষ্টা করছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.