নন্দন দত্ত, সিউড়ি: বিদায়ী সাংসদকে নাচ দেখিয়ে তাঁর কাছে দাবি আদায়ের পথ বেছে নিলেন সিউড়ি এক ব্লকের আদিবাসীরা। দাবি যে খুব বেশি জুতসই বা সাংসদ হিসাবে তিনি পূরণ করতে পারবেন না, তেমনটা নয়। এ দাবি রাজ্য সরকারের কাছে। সকাল থেকে ন’ডিহির গ্রামের মোড়ে বসেছিলেন কয়েকশো আদিবাসী মেয়ে। তাঁরা জেনেছেন, এ পথেই বীরভূমের বিদায়ী সাংসদ ও তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় রোড শো করবেন। লতাবুনি, লাটুরবোনা, তালডিহি, জামদই-সহ কয়েকটি গ্রামের মেয়েরা রবিবার সকালে রাস্তার বাঁকে বসে ছিলেন। বেলা তখন সাড়ে দশটা। দু’বারের সাংসদ শতাব্দী রায় সাদা গাড়িতে চেপে ওই পথেই যাচ্ছিলেন। পথ আগলে নাচ শুরু করলেন আদিবাসী মেয়েরা। কর্মসূচিতে দাঁড়াবার ঠিকানা ছিল না। কিন্তু শিল্পীর সম্মানে গাড়ি দাঁড় করালেন শতাব্দী। মাথায় ছোট ছোট ঘটি সাজিয়ে তার ওপর ধানের শিস দিয়ে মাথা সোজা রেখে চলল আদিবাসী নাচ। তারপর শুরু হল দাবি বা আরজি পেশ। বিদায়ী সাংসদের কাছে আদিবাসী মহিলাদের অভিযোগ, আদিবাসী প্রথায় যে পঞ্ছি পিরহেন পরে নাচতে হয়, তা তাঁদের নেই। লোকপ্রসার কেন্দ্রে শিল্পী ভাতার কোনও কার্ডও নেই। কিন্তু ঘটনা হল, এই দাবি কোনওটিই সাংসদের এক্তিয়ারে নেই। তবুও বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী ও বিদায়ী সাংসদ শতাব্দী রায়।
শনিবার রাতে ঝড়-বৃষ্টির হওয়ায় রবিবারের সকালে কিছুটা হলেও আবহাওয়া ছিল ঠান্ডা। তবে বেলা বাড়তেই রোদের তেজ বেড়েছে। তাই সকাল-সকাল প্রচারে বেরিয়ে পড়েছিলেন শতাব্দী রায়। পরনে লাল রঙের শাড়ি, ফুল স্লিভ হাইনেক ব্লাইজ আর চোখে রোদ চশমা। কখনও হুড খোলা গাড়িতে করে গ্রামের অলিগলি ঘুরে বেড়ালেন, তো কখনও আবার নিজের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে ক্ষণিকের বিশ্রাম। এভাবেই চলল প্রচার। বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে মিছিল হয় হুসনাবাদ, তারাপুর, ভুরকুনায়। বড় গ্রামের কাছে আসতেই নগরী গ্রামের প্রধান কানে কানে গ্রামবাসীদের পানীয় জল নিয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়ে দিলেন। গ্রামবাসীদের সামনে পানীয় জলের সুরাহা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন শতাব্দী রায়। বললেন, সব কাজ করা যায়নি। তবে সাংসদ তহবিলের ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। জোড়াফুলে ভোট দিলে ফের তিনি তাঁদের জন্য কাজ করার সুযোগ পাবেন। তখন গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বড় গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেবেন। পানুরিয়া, ভুরকুনা-সহ অন্যান্য গ্রামে তাঁর গাড়ির সামনে কয়েকশো হেলমেট বিহীন বাইক তৃণমূল প্রার্থীকে বরণ করে গ্রামে নিয়ে যায়। রাস্তার দু’পাড়ে চলে পুষ্পবৃষ্টি। কোথাও আবার শঙ্খধ্বনি। বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় বললেন, “এতবার এই এলাকায় এসেছি। তবু মানুষের আমার প্রতি ভালবাসা কমেনি। এই ভালবাসা তৃতীয়বারের মতো বীরভূম থেকে আমাকে দিল্লি পাঠাবে। তাই এদের ভালবাসার ঋণী হয়ে রইলাম।”
ছবি: শান্তনু দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.