Advertisement
Advertisement
সরস্বতী পুজো

ভাঙল বর্ণ-লিঙ্গের বৈষম্য, এবার সরস্বতী পুজোয় পুরোহিতের আসনে আদিবাসী ছাত্রী

ছাত্রীকে পুজোয় সাহায্য করবেন অব্রাহ্মণ শিক্ষক।

Tribal girl appointed priest for Saraswati Puja in Maldah
Published by: Sayani Sen
  • Posted:January 27, 2020 9:49 pm
  • Updated:January 27, 2020 9:49 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুজোর আয়োজনের প্রথম সারিতে থাকেন মহিলারা। নিত্যদিনের পুজো করেন তাঁরা ঠিকই। কিন্তু বাৎসরিক যেকোনও পুজোর ক্ষেত্রে তাঁরা নৈব নৈব চ! সমাজ-সময় পরিবর্তন হলেও মহিলা পুরোহিত প্রায় দেখাই যায় না। আজও কোনও মহিলাকে পুরোহিতের স্থানে বসাতে গিয়ে দু’বার ভাবেন, সমাজের বেশিরভাগ মানুষ। তবে সেই সিংহভাগ মানুষের তালিকায় না থেকে নজির গড়ল মালদহের দাল্লা হেমচন্দ্র হাইস্কুলের শিক্ষকরা। এবার সরস্বতী পুজো করবেন একাদশ শ্রেণির আদিবাসী ছাত্রী। তাঁকে পুজোয় সাহায্য করবেন অব্রাহ্মণ শিক্ষক বিনয় বিশ্বাস।

মালদহের হবিবপুর ব্লকের বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা প্রত্যন্ত গ্রাম দাল্লা। মূলত আদিবাসী, রাজবংশী এবং নমঃশূদ্র প্রধান ওই গ্রাম। যেখানে এখনও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে কুসংস্কার। সেখানেই ১৯৬৪ সালে তৈরি হয়েছিল দাল্লা চন্দ্রমোহন হাইস্কুল। গ্রামকে কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার নেপথ্যে সবসময়ই বড় ভূমিকা পালন করে এই স্কুল। এক সময় বাল্যবিবাহ রোধেও অনেক কাজ করেছে এই স্কুল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে নাবালিকার বিয়ে রুখে কন্যাশ্রী দিবসে মিলেছে স্বীকৃতি।

Advertisement

Dalla-School

সেই স্কুলই এবার জাতপাতের বিভেদ ও লিঙ্গবৈষম্য রুখতে পুরোহিত সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা বদলাতে চলেছে। তাই তো এবার ওই স্কুলের পুজোর প্রধান পুরোহিত রোহিলা হেমব্রম নামে একাদশ শ্রেণির এক আদিবাসী ছাত্রী। তাকে পুজোয় সাহায্য করবেন বিনয় বিশ্বাস। স্কুল ভরতি ছাত্রছাত্রীদের সামনে একথা ঘোষণা করেন খোদ প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ি।

[আরও পড়ুন:তেহট্টে এবার ৪০ ফুটের সরস্বতী, একাধিক মণ্ডপে থিমের রমরমা]

কিশোরী রোহিলা যদিও একথা শুনে বেশ অবাক হয়ে গিয়েছে। সে বলেন, “আদিবাসী পরিবারে জন্মেছি। আমাদের পুজোর নিয়মকানুনের সঙ্গে সেভাবে মিল নেই। তবে চেষ্টা করব। শিক্ষকরা আমাকে পুজোর নিয়মকানুন শেখাচ্ছেন। তাঁদের থেকে ঠিক শিখে নেব।” বিনয় বিশ্বাসও পুজোর প্রসঙ্গে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তাঁর কথায়, “ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ নয়, পুজোয় ভক্তিই যে আসল সে বার্তাই আমরা পড়ুয়াদের দিতে চাই। তাই আমি এবং রোহিলা দু’জন মিলে সরস্বতী পুজো করব।” প্রধানশিক্ষকও ব্যতিক্রমী এই সিদ্ধান্ত নিয়ে যথেষ্ট খুশি। তিনি বলেন, “সাধারণত স্কুলের সরস্বতী পুজোয় সমস্ত ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। সেক্ষেত্রে ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ না থাকাই ভাল। তাই আমরা সকলে মিলে ঠিক করি আদিবাসী ছাত্রী এবং অব্রাহ্মণ শিক্ষকই সরস্বতী পুজো করবেন। তাতেই সরস্বতী পুজো পূর্ণতা পাবে।”

Dalla-School

স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অবশ্য গ্রামে চাউর হতে বেশি সময় লাগেনি। সকলেই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন। প্রধানশিক্ষক-সহ অন্যান্যদের ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ না জানিয়ে পারছেন না কেউই। জাতপাতের বিভেদ ও লিঙ্গবৈষম্য রোখার এই উদ্যোগই যেন ভারতবর্ষের ঐতিহ্যকে তুলে ধরছে বলেই দাবি সকলের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement