কৃষ্ণকুমার দাস: গরমকালে মরশুমি ফল খেতে ভালবাসেন যাঁরা তাঁদের জন্য দুঃসংবাদ। এবার গ্রীষ্মে বারুইপুরের জগদ্বিখ্যাত বোম্বাই লিচু, গোলাপ খাস আম এবং অবশ্যই পেয়ারা পাবেন না। বাজারে আসবে না দুই ২৪ পরগনার ফলের বাগানের নানা জাতের জামরুল, আশফল। সুপার সাইক্লোন আমফান ১৮৫ কিমি বেগে সাগরদ্বীপে আঘাত করার পর শুধু দুই ২৪ পরগণার ঘরবাড়ির সঙ্গে ধ্বংস করে গিয়েছে, তা নয়। কয়েক হাজার বর্গ কিলোমিটারের ফলের বাগানেরও ক্ষতি করেছে। যদি সামান্য কিছু ফলের গাছে আমফান দৈত্যের তাণ্ডবলীলা থেকে কোনক্রমে বেঁচেও যায় তবে ক’দিন পর তার দাম যে আকাশ ছোঁয়া হবে তা স্বীকার করেছেন ফলচাষিরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন শুক্রবার জানিয়েছেন, “প্রায় ৫০০ বিঘা আমবাগান, ৮০০ বিঘার বেশি লিচু এবং কয়েক হাজার বিঘা পেয়ারা বাগানের ভয়ানক ক্ষতি হয়েছে। এতটাই বিশাল ক্ষতি যে এই মরশুমে আর এই বাগানে ফল আসবে না।” ভয়ানক ক্ষতি হয়েছে দুই ২৪ পরগনার পান বরোজের। বিশেষ করে কাকদ্বীপ, বসিরহাট, বনগাঁ, বাদুড়িয়া ও হাবড়ায় হাজার কয়েক পানের বরোজ ঝড়ের তাণ্ডবে কার্যত মাটিতে মিশে গিয়েছে। তাই ফল চাষিদের সঙ্গে মাথায় হাত পান চাষিদেরও।
নগরায়নের দাপটে বহু ফলের বাগানে একের পর এক বহুতল মাথা তুলছে ভাঙড়, বারুইপুর, সোনারপুরে। হাজার হাজার বিঘা জমিতে লিচু ও পেয়ারার বাগান ধুলিসাৎ করে এখন কলকাতার নামী আবাসন সংস্থার নির্মাণ চলছে দাপিয়ে। দক্ষিণের হোটর, মগরাহাট থেকে শুরু করে উত্তরের হাবড়া, বসিরহাট, বাদুড়িয়াতে ফলের বাগান কেটে ঘর-বাড়ি, শিল্প-কারখানা গজিয়ে উঠছে মাইলের পর মাইল। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে লিচু ও পেয়ারা এবং জামরুলের ফলের গাছ লাগিয়ে ফলের ফলন হচ্ছিল তা সাত ঘণ্টার ঝড়ে ভূমিশয্যায় পাঠাল আমফান। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর, বারুইপুরের কল্যাণপুর, মদারাট, হরিহরপুর, খোদারবাজার, শিখরবালি, ধোপাগাছি, ধপধপি, রামনগর থেকে শুরু করে সোনারপুরের লাঙ্গলবেড়িয়া, বনহুগলি ও কালিকাপুরে কমপক্ষে পাঁচ হাজার লিচু ও জামরুল গাছ ভেঙে পড়েছে। মাইলের পর মাইল নানা জাতের সুস্বাদু পেয়ারা বাগান শুইয়ে দিয়েছে আমফান-দৈত্যর তাণ্ডব। সিঁদুর রঙা জিভে জল আনা ‘বোম্বাই লিচু’ অনেক বাগানে পাকতে শুরু করেছিল, সেগুলি মুড়িয়ে ঝরে গিয়েছে গাছ থেকে। কল্যাণপুর, শিখরবালি বা ধপধপির লিচু বাগানের নিচে মাটিতে পড়ে থাকা হাজার হাজার লিচু গত ৪৮ ঘণ্টায় পচতে শুরু করেছে। একই অবস্থা জামরুল ও আমের বাগানেও। ছোট বড় গুটি আম এখন ঝুড়ি ঝুড়ি ভরতি হয়ে পড়ে আছে চাষির বারান্দায়। লিচু ও পেয়ারার ফলের বাগানে এত ভয়ানক ক্ষতি যে আয়লার সময়েও হয়নি বলে স্বীকার করেছেন বারুইপুর চাষি বাজারের কর্তা প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান সাইদূর রহমান। তিনি বলেন, “অধিকাংশ গাছে আর লিচু নেই, উধাও জামরুল, আশফল, সফেদা, গোলাপজামুন।” একই অবস্থা হাবড়া, ভাঙড় ও বসিরাহাটের ফল চাষিদের। এবছর আর লিচু, জামরুল ও আম নিয়ে কলকাতার বাজারে যাওয়া হবে না বলে নিজের বাগানের ডজনখানেক লিচু গাছের ফল বিক্রি করে লকডাউনের মন্দা বাজারে কর্মচারীদের বেতন দেবেন ভেবেছিলেন বাদল বাওয়ারের রণজিৎ নস্কর। কিন্তু আমফান তা ধূলিসাৎ করে দেওয়ায় গভীর চিন্তায়।
বারুইপুর থেকে জয়নগর-মগরাহাটকে বলা হয় রাজ্যের অন্যতম ফলভান্ডার। স্থানীয় মানুষের অন্যতম জীবিকা ফল চাষ। পরিবারের অনেকেই বংশানুক্রমে ফল চাষের সঙ্গে যুক্ত। জেলার কৃষি দপ্তর পরিসংখ্যান তৈরি করে উঠতে পারিনি ফলের বাগানের কত ক্ষতি হয়েছে। জেলার কৃষি দপ্তরে কর্মাধ্যক্ষ শাহজাহান মোল্লা, “বাড়ি পুড়ে লিচু মগরাহাটের সবেদা এবং ভাঙড়ের আম ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.