সৌরভ মাজি, বর্ধমান: খালের দু’পাড়ে সারি দিয়ে বড় বড় গাছ। দিনকয়েক আগেও ছিল। কিন্তু এখন নেই তার অনেকগুলোই। বর্ধমানের মেমারি-তারকেশ্বর রোডের পাশ দিয়ে ইডেন খাল। সেই খালের পার্শ্ববর্তী গাছ কাটা হয়ে যাচ্ছে অবাধে। কে কাটছেন, কার নির্দেশে কাটছেন, কোনও কিছুরই উত্তর নেই। বিষয়টি নজরে আসতেই শুরু প্রশাসনিক স্তরে চাপানউতোর। গাছকাটিয়েরা বলছেন, বিডিও সাহেব তাঁদের গাছ কেটে কাঠ নিয়ে যাওয়ার অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছেন। আর বিডিও-র দাবি, তিনি কিছুই জানেন না। শেষমেশ সেচ দপ্তরের কড়া পদক্ষেপে রোখা গেছে বৃক্ষনিধন পর্ব।
পরিবেশ সুস্থ ও সুন্দর রাখতে বৃক্ষরোপনের উপকারিতা কে না জানে? শহর, শহরতলিতে রীতিমতো আয়োজন করে, ঘোষণা করে গাছ লাগানো চলে। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার তরফে এই কাজকে উৎসাহিত করতে কর ছাড়ের ঘোষণা পর্যন্ত করা হয়েছে। আর পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকে ঠিক উলটপুরাণ। দেখা যাচ্ছে, সেচ দপ্তরের অধীনস্থ জমি থেকে অনায়াসে আকাশছোঁয়া মাথার গাছগুলো স্রেফ মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। মোটাসোটা কাণ্ড মিশে গেছে মাটির সঙ্গে, ডালপালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এদিক-ওদিক। এমন একটা ‘মহাযজ্ঞ’ চলছে, অথচ প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের কেউ কিচ্ছুটি টের পাননি। গত ২৪ তারিখ বিষয়টি চোখে পড়ে জামালপুর-১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য অলোক ঘোষের। তিনি সঙ্গে সঙ্গে জেলাশাসকের নজরে আনেন। খবর যায় সেচ দপ্তরে। জামালপুরের ভারপ্রাপ্ত সেচ আধিকারিক দীনেশ ঠিকাদার জানিয়েছেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, অনেকগুলি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটার কাজে যুক্তদের কাছে অনুমতিপত্র দেখতে চাই। তাঁরা কিছুই দেখাতে পারেননি। এরপর গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছি।’ এই গাছ কাটা যাবে না কোনওভাবেই। বিডিও-কে চিঠি লিখে সেকথা জানিয়ে দেওয়া হয় সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে। কাটা গাছগুলিকে বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দপ্তর।
এভাবে আপাতত ব্যাপারটি মিটেছে। কিন্তু জনসমক্ষে এভাবে গাছ কাটা চলছে। সত্যিই কি কারও নজরে পড়েনি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ফাঁস হল এক বিতর্কিত কাহিনী। কাঠুরেরা জানাচ্ছেন, এলাকার বিডিও তাঁদের গাছ কেটে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। তাই তারা তা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। যদিও কোনও লিখিত অনুমতিপত্র তাঁদের কাছে নেই বলেও কবুল করেছেন।
জামালপুরের ১ নং ব্লকের বিডিও সুব্রত মল্লিকের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি দাবি করেছেন, ‘২০১৪ সালে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি বিশেষ পরিস্থিতিতে ওই গাছগুলি কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তার জন্য আলাদা রেজোলিউশনও করা হয়। কিন্তু তখন গাছ কাটা হয়নি। রাস্তা চওড়া করার প্রয়োজনে সেই রেজোলিউশন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ফের গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়। চার মাস আগে টেন্ডার হয়েছিল। সেই অনুযায়ী ঠিকাদার সংস্থাকে কাজের বরাত দিয়ে কাজ শুরু হয়।’ যদি এই দাবি সত্যি হয়, তাহলে কেন ঠিকাদারদের কাছে বিডিও-র স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্র নেই? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দিতে পারেননি বিডিও। পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে খবর, আগে সিদ্ধান্ত হলেও তৎকালীন বিডিও সেচ দপ্তরে অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা পর্ব শুরুই করেননি। আচমকা সেই পুরনো রেজোলিউশনকে হাতিয়ার করে কীভাবে বৃক্ষনিধন শুরু হল, এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.