সুব্রত বিশ্বাস: শান্তিনিকেতনে চলছে পৌষমেলা। আর এই মেলার উপলক্ষ্যে হাওড়া-বোলপুর রুটের ট্রেনে যাত্রীদের কাছ থেকে বেআইনিভাবে অতিরিক্ত সারচার্জ আদায় করা হচ্ছে। তাও আবার রাজ্য সরকারের নাম ব্যবহার করে! একশ্রেণির টিকিট পরীক্ষকের বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন বীরভূম জেলা মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী কবিতা মণ্ডল। তাঁর দাবি, রীতিমতো কুপন ছাপিয়ে যাত্রীদের কাছ সারচার্জ বাবদ ২৫ টাকা আদায় করছেন টিকিট পরীক্ষকদের একাংশ। যদিও এভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে সারচার্জ আদায় করা যে বেআইনি, তা মেনে নিয়েছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র।
[বড়দিনে বেসামাল মহিলাদের সামলাতে রাস্তায় প্রমীলা বাহিনী]
গত শনিবার থেকে শান্তিনিকেতন শুরু হয়েছে পৌষমেলা। মেলা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। পৌষমেলা উপলক্ষ্যে এখন শান্তিনিকেতনে ভিড় করেছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। হাওড়া-বোলপুর রুটে প্রতিটি ট্রেনেই উপচে পড়ছে ভিড়। আর এই সুযোগে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে একশ্রেণির অসাধু টিকিট পরীক্ষক। একসময়ে বীরভূম জেলা মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী ছিলেন কবিতা মণ্ডল। বোলপুরের মেয়ে কবিতা এখন থাকেন কলকাতায়। শনিবার বোলপুর থেকে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসে হাওড়া আসছিলেন তিনি। কবিতার অভিযোগ, চলন্ত ট্রেনে যাত্রীদের হাতে একটি অস্পষ্ট কুপন ধরিয়ে দিয়ে সারচার্জ বাদ ২৫ টাকা করে আদায় করছিলেন এক মহিলা টিকিট পরীক্ষা। কীসের সারচার্জ? শাসকদলের প্রাক্তন এই নেত্রীর দাবি, ওই টিকিট পরীক্ষক যাত্রীদের বলেন, পৌষমেলা উপলক্ষ্যে রেলযাত্রীদের কাছ থেকে নাকি এই সারচার্জ নিচ্ছে রাজ্য সরকার! ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় কামরায়। বেশ কয়েকজন যাত্রী টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এরপরই পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে অন্য কামরায় চলে যান অভিযুক্ত টিকিট পরীক্ষক। কবিতা মণ্ডলের বক্তব্য, রেলের নিয়ম মেনেই যদি এই সারচার্জ নেওয়া হত, তাহলে টাকা দিতে অস্বীকার করলে তো যাত্রীদের বিরুদ্ধে জরিমানা বা অন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কিন্তু, এক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটেনি। বরং অভিযুক্ত টিকিট পরীক্ষকই অন্য কামরায় চলে যান। আর তাতেই সন্দেহ আরও বেড়েছে ওই মহিলা যাত্রীর। তিনি জানিয়েছেন, রেলের কর্মাশিয়াল বিভাগ যদি ডাকে, তাহলে অভিযুক্ত টিকিট পরীক্ষককে শনাক্ত করতেও তিনি প্রস্তুত।
কিন্তু, কোনও মেলা বা পার্বণ উপলক্ষ্যে সত্যিই কী যাত্রীদের কাছ থেকে সারচার্জ বাবদ অতিরিক্ত টাকা নিতে পারে রেল? পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র জানিয়েছেন, মেলা উপলক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট স্টেশনে রক্ষণাবেক্ষণে জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে সারচার্জ নেওয়ার আইনি সংস্থান আছে। সেক্ষেত্রে টিকিট কাটার সময়ই সেই সারচার্জ নেওয়া হয় এবং টিকিটে সেই সারচার্জের কথা উল্লেখ থাকে। চলন্ত ট্রেনে এভাবে কুপন দিয়ে যাত্রীদের কাছ সারচার্জ আদায় করা বেআইনি। এটা তোলাবাজিরই নামান্তর।যদিও ট্রেনে যাত্রীদের কাছ থেকে এভাবে সারচার্জ আদায় করা হয়, তা স্বীকার করে নিয়েছে রেলকর্মীদেরই একাংশ। তাঁরা জানিয়েছেন, শুধু পৌষমেলাই নয়, গঙ্গাসাগর মেলায় আগত পূর্ণ্যার্থীদের কাছ থেকেও এভাবেই সারচার্জ আদায় করে একশ্রেণির অসাধু রেলকর্মী। কিন্তু, গঙ্গাসাগারের আগত পুর্ণ্যার্থীদের বেশিরভাগ সমাজের নিচুতলার মানুষ। তাই রেলকর্মীদের একাংশের কারসাজি ধরতে পারেন না তাঁরা।
[খুন হয়েছে ‘পুষি’, বিচার চেয়ে থানায় বৃদ্ধ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.