রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: সকাল ৬টা বেজে ৪০ মিনিট। শিলিগুড়ির মহানন্দা অভয়ারণে্যর মধ্য দিয়ে ছুটছিল আপ শিলিগুড়ি-দিনহাটা ডেমু ট্রেন। ট্রেন চালাতে চালাতে লাইনের পাশে জঙ্গলের দিকে তাকাতেই বুক কেঁপে উঠল ট্রেনচালকের। সবুজ চিরে বেরিয়ে একেবারে লাইনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এক দাঁতাল! মাঝে মাঝে আবার শুঁড় বাগিয়ে ডাকছে, যেন স্যালুট করছে ট্রেনের চালককে।
এক দাঁতালের এমন আচরণে ততক্ষণে ওই লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। অনেকেই জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দাঁতালটিকে দেখার চেষ্টা করেন। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনচালক আপৎকালীন ব্রেক কষে ট্রেন থামিয়ে দেন। ব্যস, তারপরেই গদাই লশ্করি চালে হাতিটি রেললাইনের উপর উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে। এরপর তো সটান একেবারে রেলইঞ্জিনের কাছে চলে এসে শুঁড় তুলে ইঞ্জিন স্পর্শ করে হাতিটি। সুযোগ বুঝে নিজের মোবাইলে হাতির এই বিরল কাণ্ড কারখানা তুলে ফেলেন ট্রেনের চালক। কিন্তু বেশিক্ষণ হাতিকে তার মরজি মাফিক চলতে দিলে বিপদ হতে পারে ভেবেই সাইরেন বাজিয়ে দেন আপ শিলিগুড়ি-দিনহাটা ডেমুর চালক বিপ্লবকান্তি দাস। সাইরেন বাজতেই হাতিটি শুঁড় তুলে লাইন থেকে সরে যায়। যে ট্রেনচালক তার জীবন বাঁচাল তাঁকেই যেন শুঁড় তুলে স্যালুট করে রেলপথ ছাড়ল ওই দাঁতাল!
এভাবেই জঙ্গলপথে ফের ট্রেন থামিয়ে হাতির প্রাণ বাঁচালেন ট্রেনচালক। গত পনেরো দিনে মোট সাতবার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এই কায়দাতেই ট্রেনলাইনের পাশে হাতি দেখামাত্রই আপৎকালীন ব্রেক কষে হাতিদের প্রাণ বাঁচাতে সফল হয়েছে রেল। বন্যপ্রাণী রক্ষায় যা এককথায় নজির হয়ে রইল।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডিআরএম কে এস জৈন বলেন, “আমরা চালক, সহচালক রেলের গার্ড-সহ বিভিন্ন স্তরের রেলকর্মীদের জঙ্গলপথে ট্রেন চালানো নিয়ে নানা স্তরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকি। এইসব প্রশিক্ষণ শিবিরে বন দপ্তরের বিশেষজ্ঞরাও থাকেন। এই প্রশিক্ষণের জন্যই জঙ্গলপথে দুর্ঘটনার হাত থেকে হাতি ও অন্যান্য জন্তুদের থেকে ট্রেন বাঁচিয়ে চালানো সম্ভব হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.