সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: খাবারের সন্ধানে সমতলে নেমে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল পূর্ণবয়স্ক এক হায়নার। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির সুইসার কাছে রেললাইন থেকে আজ সকালে উদ্ধার হয়েছে বন্যাপ্রাণীটির রক্তাক্ত দেহ। তার মাথায় ও মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা পড়ে থাকতে দেখে কালিমাটি বিট অফিসের বনকর্মীদের খবর দেন। বনদপ্তরের তরফে ঘটনাস্থলে গিয়ে হায়নাটিকে উদ্ধার করে বিট অফিসে নিয়ে আসেন। পরে সেখান থেকে বাঘমুন্ডি রেঞ্জের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্ত করা হবে বলে খবর।
পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি লাগোয়া দক্ষিণ পূর্ব রেলের রাঁচি ডিভিশনের ঝাড়খণ্ডের মুড়ি-জামসেদপুর রেলপথ। দিনভর এই গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ দিয়ে বহু দুরপাল্লার, গতিসম্পন্ন ট্রেনের যাতায়াত। আগেও বেশ কয়েকবার ঠিক এই পথেই ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু হয়েছে। সেসময় রেলের রাঁচি ডিভিশনের কাছে বনদপ্তরের তরফে আবেদন করা হয়েছিল যে এই অংশে ট্রেনের গতি যাতে নিয়ন্ত্রিত থাকে। তারপরও অবশ্য বন্যপ্রাণীদের জন্য এই অঞ্চলটি সেফ করিডর হয়ে ওঠেনি। বৃহস্পতিবার ভোররাতে হায়নার মৃত্যুতে তা আরও একবার বোঝা গেল।
ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়তলি এই এলাকায় প্রচুর হায়নার রয়েছে। এছাড়া গড়পঞ্চকোটেও বেশ কিছু হায়নার বাস। পুরুলিয়া ডিভিশনের ডিএফও রামপ্রসাদ বদানা জানিয়েছেন, ‘একটি পূর্ণবয়স্ক মাদী হায়না ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছে। পাহাড় থেকে সে খাবারের সন্ধানে নিচে নেমেছিল এবং রেললাইন পেরতে গিয়েই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের প্রাথমিক অনুমান। এমনিতে সংরক্ষিত বন্যপ্রাণের তালিকায় হায়নার স্থান ৩ নম্বর। তাই এই প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’
রাজ্যের জঙ্গল লাগোয়া বিভিন্ন রেলপথে ট্রেনের ধাক্কা বন্যপ্রাণীর মৃত্যু নতুন কিছু নয়। দেখা গিয়েছে, অনেকে সময়েই হাতির পাল তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তারা রেলট্র্যাকের উপর উঠে পড়ে, একইসঙ্গে সেসময় ওই ট্র্যাকে দ্রুতগতির ট্রেনও চলে আসে। ফলে দুর্ঘটনায় অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। বন্যপ্রাণ বাঁচাতে বহুবার রেল কর্তৃপক্ষকে এসব সংরক্ষিত এলাকায় ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। এমনকী বন ও রেল মন্ত্রক নিজেদের যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে বন্যপ্রাণীদের চলাচলের জন্য নিরাপদ এলাকা তৈরিতে কাজও করেছে। কিন্তু তা যে খুব ফলপ্রসূ হয়নি, হায়নার মৃত্যুই তার প্রমাণ। সূত্রের খবর, এই ঘটনার পর পুরুলিয়া বনাঞ্চলের তরফে নতুন করে রেলের রাঁচি ডিভিশনের কাছে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণের আবেদন জানানো হবে।
ছবি: অমিত সিং দেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.