সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: হুঁশ ফেরেনি রেলের৷ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ফুট ওভারব্রিজ পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়গপুর শাখায় কয়েকহাজার যাত্রী৷ সাঁতরাগাছি ফুট ওভারব্রিজের মতোই যেকোনও দিন বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা যাত্রীদের৷ হাওড়া-খড়গপুর শাখার একাধিক স্টেশনে ফুট ওভারব্রিজের স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ যাত্রীরা৷
হাওড়া-খড়গপুর রেল যাত্রী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক অজয় দোলুই জানান, বাগনান, উলুবেড়িয়া, আন্দুলের মতো জনবহুল স্টেশনগুলিতে ফুট ওভারব্রিজগুলি অপ্রশস্ত হওয়ায় এই ধরনের দুর্ঘটনা আবার ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক দশকে ট্রেনের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনই বেড়েছে যাত্রী সংখ্যা। কিন্তু সেই তুলনায় ফুট ওভারব্রিজগুলির পরিসর বাড়ানো হয়নি। সকাল ও সন্ধ্যার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই ওভারব্রিজগুলি দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ যাত্রী পারাপার হন৷ তখন সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামার সময় ঘটে যেতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা৷’’ বাগনানের বাসিন্দা অনির্বাণ সামন্ত জানান, বাগনান রেল স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়ির ধাপগুলি ঢালু, উঁচু-নিচু ও ছোট বড় হয়ে থাকার কারণে মাঝে মাঝেই যাত্রীদের পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। স্টেশনে যখন একসঙ্গে দুটি বা তিনটি ট্রেন দাঁড়ায় তখন যাত্রীদের ওভারব্রিজ দিয়ে উদভ্রান্তের মতো ছুটতে দেখা যায়। ওভারব্রিজের অপরিসর ও ত্রুটিযুক্ত সিঁড়ি দিয়ে একসঙ্গে কয়েকশো যাত্রী ওঠানামার সময় যে কোনও দিন বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। হাওড়া ও খড়গপুরের মধ্যে বাগনান স্টেশনটি অন্যতম জনবহুল স্টেশন হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে ৩৩ হাজারেরও বেশি যাত্রী প্রতিদিন বাগনান স্টেশন হয়ে রেল সফর করেন।
[খয়রাশোলে তৃণমূল ব্লক সভাপতি খুন, গ্রেপ্তার দুই বিজেপি নেতা-সহ ১১ জন]
অজয় দোলুই জানান, ইতিমধ্যেই বিষয়টি তাঁরা রেল কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছেন। তবে তিনি জানান ৩৮৭১৪ ডাউন খড়গপুর গ্যালপিং লোকালটি সকাল দশটা নাগাদ হাওড়ায় পৌঁছায়। ওই ট্রেনটিই আবার ৩৮৮১৫ আপ মেদিনীপুর লোকাল হয়ে দশটা পঁচিশে হাওড়া স্টেশন ছাড়ে। অধিকাংশ দিনই ট্রেনটিকে হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সের ১৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দেওয়া হয়৷ যেহেতু গ্যালোপিং খড়গপুর লোকালটি সকালের অফিস যাত্রীদের নিয়ে হাওড়া স্টেশনে ঢোকে, তখনই ওই ট্রেনটিই মেদিনীপুর লোকাল হয়ে যায়৷ একদিকে যেমন নিউ কমপ্লেক্স থেকে ওল্ড কমপ্লেক্সে যাওয়ার জন্য অফিস যাত্রীদের মধ্যে তাড়া থাকে৷ তেমনি মেদিনীপুর লোকাল ধরার জন্য উলটোদিকের ওল্ড কমপ্লেক্সের যাত্রীদেরও ব্যস্ততা থাকে। উভয় দিকের যাত্রীদের ওল্ড ও নিউ কমপ্লেক্সের সংযোগকারী ফুট ওভারব্রিজটি ব্যবহার করতে হয়। এই সময় হুড়োহুড়ি করে অনেক যাত্রী এস্কেলেটরে চড়ে ওভারব্রিজে ওঠেন। প্রায় দিনই যাত্রীদের মধ্যে অবাঞ্ছিতভাবে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁধে। সবথেকে করুণ অবস্থা হয় বয়স্ক, শিশু ও মহিলা যাত্রীদের।
[দেড় কোটি টাকার নয়া লক্ষ্মীমন্দির ঘিরে উৎসাহ ময়ূরেশ্বরে]
অজয়বাবু বলেন, ‘‘উভয় দিকের যাত্রীরা ওভারব্রিজ দিয়ে যেভাবে মুখোমুখি দৌড়াতে থাকেন, তার ফলে যে কোনও দিন এই ওভারব্রিজটিতে বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এস্কেলেটরেও।’’ তিনি জানান, এই বিষয়টি তাঁরা বহুবার রেল কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও রেলের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানান, সাঁতরাগাছি দুর্ঘটনার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি অন্যান্য স্টেশনগুলির ফুট ওভারব্রিজগুলিও পরিদর্শন করবেন। কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরেই যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে রেল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.