ছবি: প্রতীকী
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: বাংলায় পাচার করেও শেষরক্ষা হল না। দুর্গাপুরের যৌনপল্লি থেকে বাংলাদেশি নাবালিকা উদ্ধার। পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার এক মহিলা-সহ তিনজন।
জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর থানা এলাকার কাদারোডে যৌনপল্লিতে এক নাবালিকাকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন সেখানকার মহিলারা। প্রথমে ওই নাবালিকাকে তাঁদের নিজস্ব সংগঠন দুর্বার মহিলা সমিতির কার্যালয় নিয়ে যাওয়া হয়। খবর দেওয়া হয় দুর্গাপুর থানার পুলিশকে। পুলিশ গিয়ে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে। এরপর দফায় দফায় ওই নাবালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ তদন্ত নেমে জানতে পেরেছে, ওই নাবালিকার বাড়ি বাংলাদেশের ঢাকার কেরানিগঞ্জে। বেকারিতে কাজ দেওয়ার নামে মাস দেড়েক আগে ওই নাবালিকাকে রাজা নামের এক ব্যক্তি বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আনে। তারপর হাত বদল হয়ে সোজা কাঁকসার পানাগড় গ্রামে। পানাগড় গ্রামে কেন? নাবালিকাকে জেরা করে পুলিশের হাতে উঠে আসে বিস্ফোরক তথ্য। পানাগড় গ্রামেই একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন বাংলাদেশের ঢাকা শহরের চারমিনার মাঠের বাসিন্দা পেশায় যৌনকর্মী সাইনুর বিবি। বেশ কিছুদিন ওড়িশায় এই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকার পর সম্প্রতি দুর্গাপুরের কাদারোডের যৌনপল্লিতে ঘাঁটি গেড়েছেন।
সাইনুরের ‘বাবু’ এখন সামী মুস্তাক আহমেদ এই পাচারের অন্যতম ‘কিংপিন’। বনগাঁ সীমান্ত থেকে এই নাবালিকাকে মুস্তাকই গাড়ি করে পানাগড় গ্রামে নিয়ে আসে। সেই গাড়িও আটক করেছে পুলিশ। সাইনুর বিবি ও মুস্তাক আহমেদ দুর্গাপুর, বর্ধমান, আসানসোলে হোটেল ও বিউটি পার্লারে মহিলা যোগান দিত বলে পুলিশ সূত্রে খবর। শুধু এই নাবালিকাই নয়, আরও এক বাংলাদেশী নাবালিকাকে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে খবর। তাকে চেন্নাই পাচার করা হয়েছে। পানাগড় গ্রাম থেকে দুর্গাপুরে নিয়ে এসে এই নাবালিকাকে তুলে দেওয়া হয় দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গির বাসিন্দা পাপ্পু রজকের হাতে। পাপ্পু আদতে দুর্গাপুরের যৌনপল্লির একজন দালাল। পাপ্পু ওই নাবালিকাকে পৌঁছে দেয় কাদারোডের সাইনুরের ‘কোঠা’য়। ওই নাবালিকাকে এলাকায় ইতস্তত ঘুরতে দেখেই পুলিশের হাতে তুলে দেয় দুর্বার মহিলা সমিতি।
সমিতির সম্পাদক রানী রায় জানান, “আমরা ওই নাবালিকাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। এবার পুলিশ গোটা চক্রকে ধরুক এটাই চাই।” সাইনুর বিবি, মুস্তাক আহমেদ ও পাপ্পু রজককে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে আদালত পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই নাবালিকাকে বর্তমানে দুর্গাপুর মহিলা থানায় রাখা হয়েছে। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে জানানো হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের এসিপি (দুর্গাপুর) তথাগত পান্ডে জানান, “তিনজনকে এই পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করে পুরো চক্রটির হদিশ করা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.