ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: শুক্রবারের পর শনিবার ফের পৌষমেলাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়ালেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। মেলার মাঠ ফাঁকা করতে বলতেই ফের বেঁকে বসেন ব্যবসায়ীরা। এদিন ফের বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনিল সিং ও সুব্রত ভকত সাফ জানিয়ে দিলেন, “আগামী দু’দিন মেলা চলবে, বিশ্বভারতীর ক্ষমতা থাকলে তুলুক।” উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে আটকে বিক্ষোভও দেখান ব্যবসায়ীরা। অশান্তির জেরে সেন্ট্রাল অফিসের সামনে দিয়ে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
২৭ তারিখ পৌষমেলা শেষ হতেই মেলার দোকান তোলাকে কেন্দ্র করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে ব্যবসায়ী সমিতি। শুক্রবার বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার করা হয় শনিবার থেকে ব্যবসায়ীদের উঠে যেতে হবে, এরপরই ব্যবসায়ী সমিতি বিশ্বভারতীর ক্যাম্পে এসে জানিয়ে দেয়, বৃষ্টির জন্য লোকসান হয়েছে, তাই মেলার মেয়াদ দু’দিন বাড়াতে হবে। বিশ্বভারতী জানিয়ে দেয় ২৮-২৯ তারিখের মধ্যে মেলা তুলতে হবে, এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে অশান্তি বাঁধে। বিকেলে বিশ্বভারতীর তরফে শান্তিনিকেতন থানায় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক-সহ দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এই বিষয়ে, বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, “মেলার দিন বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছে ব্যবসায়ী সমিতি। উপাচার্যের সামনে মেলার সঙ্গে যুক্ত আধিকারদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে তারা। তাই সুনীল সিং এবং সুব্রত ভকতের নামে থানায় এফআইআর করা হয়েছে।”
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭ তারিখ মেলা শেষ হওয়ার কথা। তাই ২৮-২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে মেলা মাঠ ফাঁকা করে দিতে হবে ব্যবসায়ীদের, শুক্রবার সকাল থেকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মাইকে তা প্রচার করে। এই প্রচারের পরই ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তাঁরা প্রশ্ন করেন, মোটা অংকের টাকা দিয়ে জায়গা বুকিং করেছেন, তাহলে কেন শনিবার উঠে যেতে হবে? তাঁরা জানান, রবিবার মেলা শেষ করে সোমবার উঠে যাবেন। ব্যবসায়ীদের দাবি নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে বিশ্বভারতীর অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যান বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিং এবং সুব্রত ভকত। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, তাঁদের পক্ষে দিন বাড়ানো কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। শনিবারই ব্যবসায়ীদের উঠে যেতে হবে। এরপরই দুই তরফে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর শুক্রবার বিকেলে শান্তিনিকেতন থানায় সুনীল সিং এবং সুব্রত ভকতের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরপরও কোনও ফল মেলেনি। শনিবার সকাল থেকে ফের দু’পক্ষের অশান্তিতে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শান্তিনিকেতন।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমিতির কথায়, মেলায় অনলাইন বুকিং বন্ধ রেখে ২৩ তারিখের পর থেকে মেলা কমিটি হাতে লেখা রসিদে ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা নিয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতি করা হয়েছে। তা চাপা দেওয়ার জন্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ী সমিতির মুখ বন্ধ করতে চাইছে। পরিবেশ আদালত কোথাও চারদিন মেলা করার নির্দেশ দেয়নি। বিশ্বভারতী জোর করে মেলা বন্ধ করে দিতে চাইছে। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিং বলেন, “মেলাতে ভিড় হয়নি তার উপর বৃষ্টি হওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের লোকসান হয়েছে। ২৮-২৯ তারিখ ভাঙা মেলা রাখার অনুরোধ করে ছিলাম। ৩০ তারিখ থে্কে মেলা সম্পূর্ন উঠে যাবে। বিশ্বভারতী মিথ্যা অভিযোগ করছে, আমাদের কাছে তার সমস্ত প্রমাণ আছে।”
ছবি: রাজেশ ভকত
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.