M
টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: একটানা ৪২, ৪৩ ডিগ্রির চোখরাঙানিতে জঙ্গলমহলের বাঁকুড়ায় লু পরিস্থিতি। সঙ্গে দোসর লোকসভা নির্বাচন। ফলে আগামী সপ্তাহে রাজ্যের স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি থাকলেও মূলত ভোট ও দাবদাহের কোপে পর্যটকশূন্য হয়ে যাবে মুকুটমণিপুর, শুশুনিয়ার মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলি। গত একসপ্তাহ ধরেই জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে থাকা হোটেল, লজ, কটেজ, রিসর্ট খাঁ-খাঁ করছে। সরকারি অতিথি আবাসগুলিও কার্যত জনশূন্য। বলা যায়, মাছি তাড়ানোর অবস্থা তৈরি হয়েছে। হাতে গোনা পুরনো কয়েকটা বুকিং পড়ে আছে হোটেল-রিসর্টগুলিতে। মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর ও বিহারীনাথে উইক এন্ডেও যে সব হোটেল, রিসর্ট পর্যটকদের মুখ দেখত সেসবগুলিতেও আগামী কয়েক সপ্তাহে নতুন করে কোনও বুকিং হয়নি।
প্রখর গ্রীষ্মে জঙ্গলমহলের এই বাঁকুড়া (Bankura) জেলায় সেভাবে পর্যটকরা আসেন না। এটাই এখানকার পর্যটনে অফ সিজন। কিন্তু করোনা মহামারীর পর গত কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্মের মরশুমেও বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের জঙ্গল লাগোয়া রিসর্ট এবং মুকুটমণিপুরে পর্যটকদের (Tourists) আনাগোনা ছিল। কারণ বিকেলের পর ঘন জঙ্গলে ঘেরা জয়পুর এবং মুকুটমণিপুর জলাধারে আরামদায়ক হাওয়া খেতে কিছু পর্যটক ভিড় করেন। সবচেয়ে বড় কথা কানায় কানায় ভর্তি জলাধারের নীল জলরাশি বিকেলের পর আবহাওয়া কিছুটি স্বস্তিদায়ক করে। ফলে দিনের বেলায় তপ্ত রোদে ঘরবন্দি হয়ে থাকলেও বিকেলের পর থেকে ফুরফুরে হাওয়ার আমেজ পেতে প্রকৃতিপ্রেমীরা এসব জায়গায় ভিড় জমাতেন। কিন্তু এবার হোলির পরেপরেই আচমকাই বাঁকুড়া জেলায় তাপপ্রবাহ (Heat wave) শুরু হয়েছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০-৪৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ঘোরাফেরা করছে। শুক্রবার জেলার সর্বোচ্চ ছিল ৪২.৭ ডিগ্রি। ফলে পর্যটকরা সেভাবে আর আসতে চাইছেন না। তার জেরে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত গাড়ি ও হোটেল ব্যবসায় মন্দার কোপ দেখা দিয়েছে। মুকুটমণিপুর (Mukutmonipur) হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুদীপ সাহু, মুকুটমনিপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিপুল সাহুরা বলছেন, ‘‘সাধারণত মুকুটমণিপুরে গরমে পর্যটকরা তেমন আসেন না। তবে গত কয়েক বছর ছবিটা কিছুটা বদলেছে। মূলত স্কুলগুলিতে গরমের ছুটির সময় উইক এন্ডে হাতে গোনা কিছু পর্যটক এখানে দেখা যেত। কিন্তু এবছর তীব্র দাবদাহের জেরে সেসব বুকিংও বাতিলের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। গত একসপ্তাহে দু’টি প্রাইভেট সংস্থার ট্যুর বাতিল হয়েছে মুকুটমণিপুরে। বেশ কয়েকজন আজও তাঁদের বুকিং বাতিল করেছেন।’’
মুকুটমণিপুর উন্নয়ন পর্ষদ নৌকাবিহার সমবায় সমিতির সম্পাদক তারাপদ সিংহ সর্দারের গলাতেও হতাশার সুর। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ৬৪টি যন্ত্রচালিত নৌকা রয়েছে। একদিকে গরম আর অন্যদিকে ভোটের জন্য মুকুটমণিপুরমুখি হচ্ছেন না পর্যটকরা। ফলে বাজার একেবারে মন্দা। খরচই উঠছে না।’’ এদিকে, বিষ্ণুপুরের হোটেল মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অসিতকুমার চন্দ্র বলেন, ‘‘এখন রোজই জেলার আবহাওয়া চল্লিশ ডিগ্রি পেরিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে হোটেল ইন্ডাস্ট্রির হাল একেবারে বেহাল। বুকিং বাতিল হয়েই চলেছে। এখন কয়েকটা বিয়েবাড়িই যা ভরসা।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘শুশুনিয়া ও বিহারীনাথ পাহাড় সংলগ্ন অধিকাংশ হোটেলের ঝাঁপ বন্ধ। হাতে গোনা দু’একটি হোটেল খোলা আছে।’’
এদিকে শুশুনিয়া পাহাড়তলিতে হস্তশিল্পের দোকানগুলিতে প্রায় বারো মাসই ক্রেতাদের ভিড় থাকে। এসব দোকান থেকে পাথরের নানা শখের জিনিসপত্র কেনেন পর্যটকরা। সেসব দোকানেও এখন ক্রেতা নেই। শুশুনিয়ার পাথরশিল্পী সনৎ কর্মকার বলছেন, ‘‘তীব্র গরম ও ভোটের জন্য মে মাসটা এমনই যাবে বলে মনে হচ্ছে। এই তো অবস্থা। আজ তো বউনিই হয়নি! গ্রীষ্মে এতটা খারাপ পরিস্থিতি সাম্প্রতিককালে হয়নি।’’ মুকুটমণিপুরের জিরো পয়েন্ট, পরেশনাথ মন্দির, বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্কও এখন কার্যত বন্ধের চেহারা নিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.