ফাইল ছবি
অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: একদিকে বেড়ানোর নেশা। অন্যদিকে পুজোর ছুটি। হাতে রীতিমত স্বর্গের চাঁদ পেয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর (Paschim Medinipur) জেলার রাধামোহনপুরের বছর ২৬ এর যুবক তাপস মান্না পাড়ি দিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডে (Uttarakhand)। স্বপ্নেও ওই যুবক ভাবতে পারে নি যে, সে খুশি এক লহমায় বদলে যাবে দুঃস্বপ্নে!
গত ১৪ তারিখ তাপস হাওড়া থেকে দুন এক্সপ্রেসে পাড়ি দিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশ্যে। ১৬ তারিখ দুপুরে নামেন হরিদ্বার স্টেশনে। সেখানে পৌঁছে মাকে ফোনে জানিয়েছিল, ওখানকার নান্দনিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির অপরূপ দৃশ্যের বর্ণনা, ব্যস! ওটাই ছিল মা কাজল মান্নার সঙ্গে ছেলের শেষ কথা! অনবরত টিভিতে চলতে থাকা উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা দেখে শিহরিত হয়ে ওঠা মায়ের কাঁপা হাত মোবাইল চেপে ধরে বারে বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু বারে বারে নিরাশ হতে হয়েছে তাঁকে। হাজার চেষ্টাতেও কোনও মতে যোগাযোগ করা যায়নি ছেলের সঙ্গে, জানালেন কাজল দেবী। ফলে দুঃশ্চিন্তা গ্রাস করতে থাকে তাঁকে। পরিবারের একমাত্র ছেলের জন্য চিন্তায় মুষড়ে পড়েন মা-বাবা ও ছোট বোন।
যুবকের মা কাজল আরও দেবী জানিয়েছেন, বরাবরই বেড়াতে ভালোবাসত ছেলে। ডেবরা থানার বালিচকে অবস্থিত অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কার্যালয়ে একটি ঠিকাদারি অধীনস্থ বেসরকারি পদে কর্মরত তাপস পুজোর ছুটি পেয়ে পরিবারকে জানায়, এবার তিনি উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে যাবেন! সেই মতো ১৪ই অক্টোবর সকালে নবমীর দিন বেরিয়ে পড়েন তিনি একাই। এরপর পৌঁছে সেখানে একবার মাত্র ফোনে কথা হয় পরিবারের সঙ্গে। ব্যাস এইটুকুই! এরপরে আর কোনও ভাবে যোগাযোগ করা যায়নি তাপসের সঙ্গে।
এদিকে, পরবর্তীতে ওই যুবক জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে হরিদ্বারের রুদ্রপ্রয়াগে অশান্ত, এবং ব্যাপকভাবে খরস্রোত নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোন রকম ভাবে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর কাছে জমানো অর্থও প্রায় নিঃশেষ! কোনও রকম ভাবে অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটছে। তাঁরা এমন জায়গায় আটকে রয়েছেন যেখান থেকে কোনওদিকে যাওয়ার উপায় নেই। রাস্তায় পাহাড় ধসে বন্ধ যান চলাচল। পাহাড়ি নালা উপচে হু-হু করে জল নামছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী থাকলেও পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে তাঁরাও কাজে নামতে পারছেন না। বহু জায়গায় আটকে রয়েছেন হাজার হাজার পর্যটক! খাবারের ট্রাক রাস্তায় আটকে, পানীয় এবং খাবারের দাম পাঁচগুন বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে ইতিমধ্যেই খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মাত্র কয়েক মিনিটে ফোনের বার্তালাপেই সামগ্রিক এক করুন দুর্দশার চিত্রর বর্ণনা দিয়েছেন বলে জানালেন তিনি। ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন রয়েছে পরিবারও। কাজল দেবী জানিয়েছেন, ছেলে কি ভাবে বাড়িতে ফিরবে তা নিয়ে খুব চিন্তিত রয়েছে পরিবার। সরকারি তরফে সাহায্যের করুন আর্তি জানিয়ে একমাত্র ছেলের বাড়ি ফিরে আসার অপেক্ষায় চাতকের মতো দিন গুনছেন এক অসহায় মা! এদিকে এই ব্যাপারে ডেবরা থানার ওসি প্রণব পাত্র জানিয়েছেন, এই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে এই যুবক নিরাপদ স্থলে রয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.