সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: স্কোয়াড থেকে ৪০ লক্ষ টাকা, AK-47, গোলাগুলি-সহ প্রেমিকাকে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার পর কেটেছিল পাঁচমাস। তারপর শুক্রবার ঝাড়খণ্ড পুলিশের হাতে আত্মসমর্পণ করলেন মাওবাদী শীর্ষনেতা (Maoist leader) মহারাজ প্রামাণিক। রাঁচিতে ডিজি কার্যালয়ে AK-47, ১৫০ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন ও ওয়ারলেস-সমেত পুলিশের হাতে ধরা দেন নিজেই। রাঁচির (Ranchi)সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ সুরেন্দ্রকুমার ঝাঁ বলেন, “ঝাড়খণ্ডের মাও আত্মসমর্পণের নীতিতে সাড়া দিয়ে মহারাজ প্রামাণিক আত্মসমর্পণ করেছেন। এই আত্মসমর্পণ ঝাড়খণ্ড পুলিশের কাছে বড় সাফল্য।”
২০২১ সালের ১৪ আগস্ট মাওবাদী শীর্ষ নেতা মহারাজ তার প্রেমিকা তথা মাও এরিয়া কমিটির সদস্য বেলুন সর্দারকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরই তাকে গণআদালতে শাস্তি দেওয়ার ফতোয়া জারি করে সিপিআই (মাওবাদী)। ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) বাংলা-ঝাড়খণ্ড পুলিশের ত্রাস এই মাওবাদী নেতা মহারাজ সংগঠনে একাধিক নাম নিয়ে কাজ করতেন। রাজ ওরফে বল্লু ওরফে অশোক – এমনই নানা নামে তার বিরুদ্ধে ১১৯ টি খুন ও নাশকতার মামলা ছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহারাজের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোওয়া জেলার ইছাগড় থানার দারুদা গ্রামে। ২০০৭-০৮ সালে ঝাড়খণ্ডের চান্ডিল কলেজে পড়ার সময় তাঁর মাকে এলাকার মানুষজন কোনও ঝামেলার কারণে ‘খুন’ করার পরিকল্পনা করে। তাঁর মা ছিলেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। এরপর ২০০৮-০৯ সালে মহারাজ সিপিআই (মাওবাদী)তে যোগ দেন। তাঁকে ভাল ক্যাডার হিসেবে গড়ার লক্ষ্য ছিল সংগঠনের। তাই ২০১১ সালেই মহারাজকে এরিয়া কমিটির সদস্য করে দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে তিনি দক্ষিণ জোনাল কমিটির সদস্যপদ পান। ওই জোনাল কমিটির অধীনে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর লাগোয়া বুন্ডু-চান্ডিল সাব জোনের কমান্ডার, ইনচার্জের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও দেওয়া হয়। দল তাকে সামনে রেখে বাংলা-ঝাড়খন্ডে সংগঠনের বিস্তার ঘটাতে চাইলেও ‘ভোগবাদী’ মহারাজ দলবিরোধী কাজ করতে শুরু করে বলে মাওবাদীরা প্রেস বিবৃতিতে জানায়।
অভিযোগ, ওই শীর্ষ মাওবাদী নেতা স্কোয়াড ছেড়ে পালিয়ে আসার পর ঝাড়খণ্ড পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। ঝাড়খণ্ড পুলিশ তাকে কাজে লাগিয়েই মাও পলিটব্যুরো সদস্য কিষাণদা ওরফে প্রশান্ত বোসকে সস্ত্রীক গ্রেপ্তার করে। মহারাজের মাথার দাম হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা ধার্য করেছিল ঝাড়খণ্ড পুলিশ। মহারাজের প্রেমিকা বেলুন নিজের সঙ্গীদের নিয়ে আগেই আত্মসমর্পণ করেছিলেন। ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি বাংলার জঙ্গলমহলেও সংগঠন গোছানোর চেষ্টা করছিলেন মহারাজ। এদিন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের পর তিনি বলেন, “যে নীতি-আদর্শের কথা ভেবে সিপিআই (মাওবাদী)তে যোগ দিয়েছিলাম, কাজের ক্ষেত্রে সেই নীতি, আদৰ্শ ছিল না সংগঠনের। তাই স্কোয়াড থেকে বেরিয়ে আসি।” তাঁর এই আত্মসমর্পণে (Surrender) তার বাবা, মা-সহ পরিবার খুশি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.