সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের যাবতীয় কমিটির সদস্যপদ থেকে সরে গেলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবারই বড়সড় রদবদল হয়েছে চলচ্চিত্র উৎসব কমিটিতে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। এই খবর অবশ্য আগেই কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল। তবে গতকাল সম্ভাব্য খবরকে সত্যি করে রাজ্যের তথ্য ও সম্প্রচার দপ্তর থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রসেনজিতের অপসারণের খবর প্রকাশ্যে আনা হয়। তবে এবার চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারনের পর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের যাবতীয় কমিটি থেকে প্রসেনজিতের সরে দাঁড়ানোর খবরে বেজায় জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকী, এর নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক যোগসাজশ রয়েছে বলেই মনে করছেন ইন্ডাস্ট্রির একাংশ। রাজ চক্রবর্তীকে নির্বাচনের জন্যই কি তাঁর এই অভিমান? মুখ খুললেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
“আমি রাজকে বলেও দিয়েছি যে এবছর কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (কেআইআইএফ)-এর কমিটির কোনও কাজে অফিশিয়ালি আমি যুক্ত থাকতে পারব না।”
গত ১০ বছর ধরে চলচ্চিত্র উৎসবের কমিটিতে সদস্য হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এমনকী, চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ হওয়ার জল্পনা ঘিরেও অভিনেতা তথা প্রযোজক সম্প্রতি বলেছিলেন, “কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে আমায় কেউ আলাদা করতে পারবে না। আমি গত ১০ বছর ধরে কমিটির সদস্য ছিলাম। আমি ওদের সঙ্গে রয়েছি, থাকবও। আমাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরাতে হলে সম্মানের সঙ্গে সরানো হোক।” তবে শুক্রবার রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তি জারির পর প্রসেনজিৎ কমিটির সমস্ত পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সরকারকেও। চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণের পর অবশ্য অভিনেতাকে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বিশেষ উপদেষ্টা কমিটিতে থাকার আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। তবে তিনি সেই প্রস্তাবও নাকচ করে দেন।
হঠাৎ কেন চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়? বর্তমানে এই প্রশ্নেই সরগরম গোটা ইন্ডাস্ট্রি। এপ্রসঙ্গে অভিনেতার বক্তব্য, ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য কমিটির দায়িত্বভার সামলাতে তাঁর অসুবিধে হচ্ছিল। আর সেই জন্যই এর আগে কমিটির বেশ কিছু মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে পারেননি তিনি। সময়ের অভাবই তাঁর এই সিদ্ধান্তের একমাত্র কারণ।
কিন্তু উপদেষ্টা কমিটিতে থাকার প্রস্তাবও কেন ফেরালেন প্রসেনজিৎ? তাঁর পরিবর্তে রাজ চক্রবর্তীকে নির্বাচনের জন্যই কি প্রসেনজিতের এই অভিমান? প্রসেনজিতের সাফ উত্তর, “রাজ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। গতকালই রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর ও আমাকে ফোন করেছিল। যখনই চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে ওর কোনও অসুবিধে হবে, কিংবা আমাকে প্রয়োজন হবে, আমি সবসময়েই রাজের পাশে রয়েছি। থাকবও। আমি ওকে বলেও দিয়েছি যে এবছর কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (কেআইআইএফ)-এর কমিটির কোনও কাজে অফিশিয়ালি আমি যুক্ত থাকতে পারব না।”
দিন কয়েক আগেই ইডির তরফ থেকে অভিনেতাকে সারদা মামলায় তলব করা হয়েছিল। তখনই গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুব একটা ভাল নেই। উপরন্তু দিল্লি যাওয়ার পথে মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হওয়া নিয়ে বেশ জল্পনার সৃষ্টি হয়েছিল ইন্ডাস্ট্রিতে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বোধহয় এবার বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন এমনটাই গুঞ্জন উঠেছিল। কেননা সম্প্রতি তাঁর বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও গেরুয়া শিবিরের সদস্যপদে নাম লিখিয়েছেন। তবে এসমস্ত গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে অভিনেতা জানিয়েছিলেন, “দু’জনেই বিজনেস ক্লাসে যাচ্ছিলেন। আর তাছাড়া সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেই সদ্ভাব বজায় রেখে চলেন তিনি। বিমানে সফরসঙ্গী হিসেবে কেউ থাকলে, তার সঙ্গে কথা বলা মানেই যে তিনি কোনও রাজনৈতিক দলে নাম লেখাচ্ছেন এমনটা নয়!” তবে হঠাৎ কেন চলচ্চিত্র উৎসবের যাবতীয় কমিটি থেকে সরে গেলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, এর নেপথ্যে কি শুধুই তাঁর সময়ের অভাব নাকি রাজনৈতিক কোনও কারণ রয়েছে? এই প্রশ্ন কিন্তু অনেকেই তুলেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.