দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ডেঙ্গুর দাপট ঠেকাতে এবার নড়েচড়ে বসল হুগলি জেলা প্রশাসন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ডেঙ্গুর মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে চলেছে পুরসভা। পরপর দু’দিনে হুগলিতে দুই জনের মৃত্যুই প্রশাসনিক আধিকারিকদের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার জেরেই অবিলম্বে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ড্রোনের মাধ্যমে শ্রীরামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ডেঙ্গুর আঁতুড় ঘরের সন্ধানে আকাশ পথে নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকাগুলিতে পুর প্রতিনিধিরা ডেঙ্গু রোধে রাস্তায় নেমে কাজ শুরু করেছেন। বহু জায়গায় দেখা গিয়েছে নাগরিকরাই তাঁদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অসচেতন। সেই কারণেই এখনও এলাকার বিভিন্ন জায়গায় জমে রয়েছে জল, আবর্জনা। আর তা থেকেই এই মারণ রোগ ডেঙ্গুর উৎপত্তি। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে বোঝানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
রাজ্যে ইতিমধ্যেই বহু মানুষের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হুগলির দুই জন। তাই ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা যাতে আর না বাড়ে সেই কারণেই বুধবার বিকেলে শ্রীরামপুর মহকুমাশাসকের দপ্তরে হুগলির জেলাশাসক রত্নাকর রাও মহকুমাশাসক তনয় দেব সরকার, এডিএম(হেলথ) প্রলয় মজুমদার, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিাকারিক ডাঃ শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, শ্রীরামপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার কমল কিশোর সিং, পুরসভার চেয়ারম্যান অমিয় মুখোপাধ্যায় ও পুরপিতাদের নিয়ে এক জরুরি প্রশাসনিক বৈঠক করলেন।
বৈঠকে স্থির হয় বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুরের ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। বৃহস্পতিবার এই তিনটি ওয়ার্ডের সমস্ত বাড়ি, নর্দমা, পরিত্যক্ত বাড়ি এবং শ্রীরামপুর এলাকার যে সমস্ত বড় বড় সিটি কমপ্লেক্স আছে সেগুলোতে অভিযান চালিয়ে মানুষকে সচেতন করা হবে এবং সেইসঙ্গে এলাকা জঞ্জালমুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ড্রোনের মাধ্যমেও নজরদারি চালানো হবে। পরিস্থিতি বেগতিক ঠেকলে লোকের বাড়ি ঢুকে ফ্রিজের পিছনে জল জমে রয়েছে কিনা তাও দেখা হবে।
এদিকে জেলার হাসপাতালগুলিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। তাই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে শ্রীরামপুরের হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য দু’টি ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। প্রত্যেক রোগীকে সেখানে মশারি টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, উত্তরপাড়া পুর এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে বুধবার সকাল থেকেই পুরপ্রধান দিলীপ যাদব নিজে দাঁড়িয়ে সাফাই অভিযান চালান। শখের বাজার এলাকায় বিভিন্ন নর্দমায় স্থানীয় মানুষ ও ব্যবসায়ীরা নোংরা ফেলায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ পুরপ্রধান। শখেরবাজার এলাকায় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ কেউ তার সমস্ত পচা ফল, চায়ের ভাড় নর্দমার মধ্যে ফেলে দেওয়ায় জল নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দিলীপ যাদব।
অন্যদিকে, বুধবার বিকেলে বিজেপির কেন্দ্রীয় যুব সম্পাদক সৌরভ শিকদার, রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি দেবজিৎ সরকার, বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শ্যামল বসু-সহ অন্যান্যরা ডেঙ্গুতে মৃত সুনিধি শর্মার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সমবেদনা জানান। বিজেপি নেতৃত্ব ছোট্ট সুনিধির মৃত্যুর জন্য শ্রীরামপুর পুরসভার উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.