ধীমান রায়, কাটোয়া: বিকেলে একতলার ছাদে উঠে স্মার্টফোন নিয়ে পায়চারি করছিলেন এক গৃহবধূ। মনটা পড়েছিল ফেসবুকে। তাই আশপাশের দিকে ততটা খেয়াল ছিল না। ফলে তিনি জানতেই পারেননি বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাঁর ফোনের দিকে নজর রেখে চলেছে একজোড়া চোখ। শেষপর্যন্ত পিছন থেকে ‘চুরি’ করে ফেসবুকে লক্ষ্য রাখা আর পোষায়নি আগন্তুকের। তাই আচমকা গৃহবধূর হাত থেকে স্মার্টফোনটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তার রণংদেহি মূর্তি দেখে আঁতকে ওঠেন ওই যুবতী। কিন্তু, তারপরও সাধের ফোনটি হাতছাড়া করেননি। স্মার্টফোনটি বাঁচাতে একতলার ছাদ থেকে সোজা ঝাঁপ মারেন নিচে। এর ফলে ফোনটি অক্ষত থাকলেও, দুটি পা ভেঙে বর্তমানে বর্ধমানে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ওই যুবতী। বুধবার বিকেলে অভূতপূর্ব এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া শহরে। ২২ বছর বয়সী ওই গৃহবধূর নাম কোয়েল দাস।
কাটোয়া শহরের কাশিগঞ্জপাড়ার বাসিন্দা কোয়েল দাস। বাপের বাড়ি কাটোয়ার কাছারিপাড়ায়। স্বামী অর্ক দাস ব্যবসা করেন। বছর দেড়েকের সন্তান রয়েছে তাঁদের। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্তানকে নিয়ে বাপেরবাড়ি আসেন কোয়েলদেবী। বুধবার বিকেলে তাঁর ছেলে ঘরে ঘুমাচ্ছিল। তখন তিনি স্মার্টফোনটি নিয়ে ছাদে গিয়ে পায়চারি করছিলেন। কোয়েলদেবী জানিয়েছেন, মোবাইল নিয়ে নাড়াচাড়া করার সময় হঠাৎ তাঁর পিছন দিক থেকে একটি হনুমান চড়াও হয়। ফোনটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কোয়েলদেবী যতই মোবাইলটি সামলানোর চেষ্টা করেন ততই দাঁত খিঁচিয়ে ওঠে সে। বাঁচার কোন উপায় নেই দেখে সোজা নিচে ঝাঁপ দেন। হতভম্ব হয়ে পাশের ছাদে পালিয়ে যায় হনুমানটিও।
তাঁর কাকা নিতাই মোদকের কথায়, “হনুমানটি যেভাবে ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল তাতে ভয় পেয়ে যায় ভাইঝি। বাঁচার জন্য ছাদ থেকে ঝাঁপ দেয়। এর ফলে ওর দু’পায়ের গোড়ালির হাড় ভেঙেছে। প্রথমে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। রাতে বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে ভরতি করা হয়।”
বৃহস্পতিবার বিকেলে কোয়েলদেবীর দুটি পায়েই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আপাতত তাঁকে দীর্ঘদিন বিছানায় কাটানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাই মন খারাপ। যদিও তাঁর স্বামী অর্ক দাস স্ত্রীকে বলছেন, “মন খারাপ করো না। তোমার স্মার্টফোন তো রয়েছে। যতখুশি দেখো।” স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কাটোয়া শহরের মধ্যে সম্প্রতি হনুমানের উপদ্রব খুব বেড়েছে। এর আগেও কয়েকজনকে ঘায়েল করেছে ক্ষিপ্ত হমুমানের দল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.