সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বিশ্ব পরিবেশ দিবসে কেবল দেওয়ালেই প্রতিবাদের ঝড় তোলা নয়৷ অযোধ্যা পাহাড় এবং টুরগা ঝরনা রক্ষার দাবিতে এবার একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করল ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। সংগঠনটি জানিয়েছে, এই উদ্দেশ্যে আগামী ১৭ জু্ন থেকে জেলার কুড়িটি ব্লকের সরকারি দপ্তরে স্মারকলিপি জমা দেবেন তাঁরা৷ ২৫ জুন তাঁরা দেখা করবেন জেলাশাসকের সঙ্গে। এবং ৩০ জুন ‘হুল দিবসে’র দিনে রঘুনাথপুরে এই প্রকল্পের বিরোধিতায় বাইক মিছিল করবেন সংগঠনের সদস্যরা।
[ আরও পড়ুন: এবার আলিপুর চিড়িয়াখানা ও বেঙ্গল সাফারি পার্কে মিলবে ‘ভারচুয়াল রিয়ালিটি’র মজা]
তাঁদের দাবি, গাছ কেটে ও বন্যপ্রাণের ক্ষতি করে অযোধ্যা পাহাড়ে টুরগা প্রকল্প করা যাবে না। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এই সংগঠনের জওয়ান মহলের পুরুলিয়া জেলার সভাপতি রাজেন টুডু বলেন, “টুরগা প্রকল্প হলে হাজার-হাজার গাছ কাটতে হবে। বন্যপ্রাণ বড়সড় বিপদের মুখে পড়বে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে টুরগা প্রকল্প গড়তে আমরা দেব না। সেই বক্তব্যই চলতি মাসে পথে নেমে একাধিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকার তথা প্রশাসনকে জানাব আমরা।” পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় টুরগা ঝরনাকে ঘিরে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করছে রাজ্য সরকার। যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০১৬ থেকে। সম্প্রতি এই প্রকল্প নিয়ে সরব হয়েছেন পাহাড়ের মানুষজন। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা একাধিক প্রতিষ্ঠান-সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এই বিষয়ে তারা উচ্চ আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছে৷ যে মামলায় এই প্রকল্পে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিতাদেশে রয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে টুরগা প্রকল্পের বিরোধিতায় পাহাড় জুড়ে দেওয়াল লেখা হয়েছিল। আজও যা জ্বলজ্বল করছে। দেওয়ালে লেখা হয়, “জঙ্গলই আমাদের মাতা-পিতা, একে ধ্বংস করে অনাথ করিবেন না।” কিংবা “প্রোজেক্ট নয়, প্রোটেক্ট চাই…জলাধার নয়, বনাধার চাই।” বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সংগঠনগুলি শপথ নেয়, “আমার তোমার সবার দাবি / টুরগা, বাঁদু, কাঁঠালজল প্রকল্পে লাগাও চাবি।”
[ আরও পড়ুন: ‘ফাঁসি দেওয়া হোক’, ভয়ংকর খুনের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ‘চেনম্যান’-এর স্ত্রীর ]
ভোটের আগেই পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির অযোধ্যা পাহাড়ের কম বেশি ৬৫টি গ্রামের মানুষ টুরগার বিরোধিতায় আওয়াজ তোলেন। তাই রাজনৈতিক দলগুলির বদলে, কুড়ে ঘরের দেওয়ালে জায়গা করেছিল টুরগার বিরোধিতায় খোদাই করা স্লোগান। যেখানে লেখা হয়, পরিবেশ মন্ত্রকের আদেশ অমান্য করে টুরগা প্রকল্প করা যাবে না। বন দপ্তর সূত্রে খবর, এখনও এই প্রকল্পে স্টেজ টু-র অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্র সরকার। আদালতেও স্থগিতাদেশ থাকায় এই প্রকল্পে কত গাছ কাটা পড়বে তার চূড়ান্ত সমীক্ষা এখনও করেনি বনদপ্তর। সবে মিলিয়ে এই প্রকল্পের বিষয়ে আপাতত ধীর গতিতে এগোচ্ছে রাজ্যের বিদ্যুৎবণ্টন সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তবে পুরুলিয়া বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬-র সমীক্ষা বলছে, যে জায়গায় টুরগা জলপ্রকল্প হওয়ার কথা, সেখানে ঔষধি-সহ প্রায় ২ হাজার গাছ ছিল। কিন্তু এখন জঙ্গল বেড়েছে। ফলে এখন গাছের সংখ্যা হাজার দশেক ছাড়িয়ে যেতে পারে।
[ আরও পড়ুন: ইউটিউব চ্যানেল খুলে পুরস্কার জিতে নিলেন আলিপুরদুয়ারের শুভঙ্কর ]
পুরুলিয়ার বন আধিকারিক রামপ্রসাদ বদানা বলেন, “ওখানে কত গাছ রয়েছে তা এখনও সমীক্ষা হয়নি। তবে সেখানে থাকা বন্যপ্রাণের বিষয়ে ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন প্ল্যান তৈরি হয়েছে।” প্রাথমিক সমীক্ষায় বনদপ্তর দেখেছে, সেখানে ৫৮০ রকমের পাখি রয়েছে। রয়েছে ৪৮৬ রকমের বন্যপ্রাণ। জানা গিয়েছে, ওই বন্যপ্রান সংরক্ষণের পরিকল্পনা রাজ্যের মুখ্য বনপাল তথা চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন রবিকান্ত সিনহার কাছে পাঠানো হয়েছে।
ছবি: অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.