বিক্রম রায়, কোচবিহার: রাজা নেই। বসে না রাজদরবার। রাজবাড়িও শুনশান। অথচ রাজার দেওয়া নথি এখন অনেক পরিবারের অস্তিত্ব রক্ষার কবজ। অসমে নাগরিকপঞ্জিতে নাম তোলার জন্য কোচবিহার রাজ আমলের সিলমোহর দেওয়া নথিকেই মান্যতা দেওয়া হচ্ছে। সেই নথির খোঁজে এখন অসমের বধূ কোচবিহারের মেয়েরা ভিড় করেছেন বাপের বাড়ির গ্রামে। অনেকেই ইতিমধ্যে নথি জোগাড় করে পঞ্জিতে নাম তুলে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন।
[নিজেকে মোর্চার প্রেসিডেন্ট বলে দাবি গুরুংয়ের, এনআরসিতে গোর্খাদের বাদ পড়া নিয়ে উদ্বেগ]
কোচবিহার ও পার্শ্ববর্তী জেলার প্রচুর মেয়ের বিয়ে হয়েছে নিম্ন অসমে। তাঁদেরই একজন বিউটি বেগম। পনেরো বছর আগে বিউটির বিয়ে হয় অসমের ধুবড়ি জেলার গোলকগঞ্জ থানার ছোট গুমা এলাকায়। এতদিন সেখানে থাকতে কোনও নথির প্রয়োজন হয়নি। এখন নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে প্রয়োজন কোচবিহার রাজ আমলের নথি। তাই পুন্ডিবাড়িতে ছুটে আসেন। এখানেই তাঁর বাপের বাড়ি। তাঁর হাতে পৈতৃক জমির কাগজ তুলে দেন তাঁর বাবা। ওই নথি কোচবিহারের মহারাজার কাছ থেকে পূর্বপুরুষ পেয়েছিলেন। সেটা দেখিয়ে নাগরিক পঞ্জিতে নাম তুলতে সক্ষম হন বিউটি। তিনি বলেন, “খুব চিন্তায় ছিলাম। বাবা দুই পুরুষ আগের রাজার দেওয়া জমির দলিল যত্ন করে রেখেছিলেন। সেটাই কাজে লাগল।” শুধু বিউটি বেগম নয়। আরও অনেকে এভাবে রাজ আমলের স্ট্যাম্প সম্বলিত নথি জোগাড় করে পঞ্জিতে নাম তুলেছেন। কিন্তু বিউটি বেগম নিজের নাম তুলতে সক্ষম হলেও বিপাকে পড়েছেন শাশুড়ি জসিকা বিবি। চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে নাম বাদ পড়েছে। তাঁর বাপের বাড়ি তুফানগঞ্জ ১ নম্বর ব্লকের চিলাখানা এলাকায়। রাজ আমলের নথি খুঁজতে কয়েকদিন থেকে তিনি সেখানে।
[আন্ডারপাসের দাবিতে রানাঘাট স্টেশনে অবরোধ, অফিস টাইমে বিপাকে নিত্যযাত্রীরা]
কেন নাগরিকত্ব প্রমাণে রাজ আমলের নথিকে মান্যতা দিচ্ছে অসম সরকার? গবেষকদের একাংশের মতে, নিম্ন অসমের কিছু এলাকা এক সময় কোচবিহার মহারাজের শাসনাধীনে ছিল। তাই সেই রাজ আমল না থাকলেও ভিনদেশি নয় প্রমাণের জন্য মহারাজের নথি গুরুত্ব পেয়েছে। ইতিহাস গবেষক নৃপেন পাল জানিয়েছেন, মহারাজা নর নারায়ণের রাজত্বকালে অসমের কয়েকটি জেলা কোচবিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে তিনি সংকোশ নদী ওপাশ থেকে নিজের ভাই চিলা রায়কে রাজত্ব ভাগ করে দেন। রাজকর্মচারী ও রাজার অনুগ্রহ প্রাপ্ত বাসিন্দাদের মহারাজা নিজেই জমি প্রদান করতেন। তাদের কাছে সেই নথি রয়েছে। ওই কারণে রাজ আমলের নথিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গবেষক দেবব্রত চাকী বলেন, “ইতিমধ্যে অনেক পরিবার রাজ আমলের জমির নথি সংগ্রহ করে নাগরিক পঞ্জিতে নাম তুলতে সক্ষম হয়েছেন। সেখানে যে সমস্ত নথি বৈধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম কোচবিহারের মহারাজার দেওয়া নথি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.