দীপঙ্কর মণ্ডল, বীরভূম: দরজা খোলাই ছিল। ছিমছাম বহুতল। পাঁচতলায় নিজের ঘরে, বিছানায় বসে শতাব্দী রায়। ঘরোয়া পোশাক। খোলা চুল। বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থীর কোলে পুরনো ডায়েরি। নিজের বহু বিখ্যাত কবিতার পাণ্ডুলিপি সযত্নে রাখা। গত একমাস নির্বাচনী প্রচারে বহু ঘটনা ছুঁয়ে গিয়েছে। কবিতা হয়ে যাচ্ছে সেইসব। এই ডায়েরিতে এক সময় লিখেছিলেন, দাঙ্গা বিষয়ক কবিতা ‘ও মেয়ে তোর বয়স কত’। নিজের নির্বাচনী প্রচারের কিছু ঘটনা নিয়ে গদ্য এবং কবিতা লিখছেন তিনি।
লোকসভা ভোটে নিজের কেন্দ্রে এবারের মতো প্রচার শেষ। ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম। টেনশন নেই। কবি, সাহিত্যিক, অভিনেত্রী এবং সাংসদ হিসাবে তাঁর পরিচিতি। গত ১০ বছর টানা সংসদের সদস্য। ‘হ্যাটট্রিক’ হতে চলেছে ধরে নিয়ে হালকা মেজাজে এক সময়ের টলিউড হার্টথ্রব। গত একমাস বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা ছুটে বেড়িয়েছেন। রামপুরহাটের নিশ্চিন্তপুরে নিজের ফ্ল্যাটে রাতের কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম। বাকি সময় বাইরেই কেটেছে। গত কয়েকদিনের ঘটনা ‘রি-কল’ করছিলেন। “বীরভূমের মানুষ ১০ বছর আগে আমাকে যতটা ভালবাসতেন, এখন আরও বেশি চান। জানেন আজ একজন আমার হাত চেপে ধরেছেন। বলছেন-ওমা কী নরম হাত! এই সারল্য আর কোথাও আমি দেখিনি। দলের ক্ষমতা আরও বেড়েছে। দিদিকে আরও বেশি মানুষ ভালবাসেন। ফলে জেতা নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা করছি না।” গভীর বিশ্বাসী শোনাল তাঁর গলা।
চিনি ছাড়া চা ও বিস্কুট এল। এগিয়ে দিলেন নিজের হাতেই। নিজের প্রচারের শেষ দিনে নলহাটি এবং রামপুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় দিনভর রোড শো করেছেন। আগে থেকেই ঠিক ছিল। সকাল থেকে ঘুরেছেন। অসহ্য গরমে দরদর করে ঘেমেছেন। ভালবাসার অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। কিছু জায়গায় মানুষ ক্ষোভও দেখিয়েছেন। কিন্তু তিনি অভিজ্ঞ, তাই নির্বিকারও। দুপুরে নলহাটিতে এক সদ্য যুবক ‘ছবি ছবি’ করে চেঁচাচ্ছিলেন। বীরভূমের বিদায়ী সাংসদ এগিয়ে যাওয়ায় ছেলেটি বললেন, “এবার প্রথম ছবি তুলেছি। তুমাকে ভোট দিবো।’ রামপুরহাটের এক মহিলা বলছিলেন, “রান্না থামিয়ে রেখে শতাব্দীকে দেখতে এসেছি। গ্যাস বন্ধ করলাম কিনা, কী জানি।” এমন কত কত কথা কবিতার ফ্রেমে ধরে রাখতে চান শতাব্দী। ১০ বছর আগে যখন তিনি বীরভূমের অলিগলি ধরে যেতেন, ছোটরা পিছন পিছন দৌড়ত। সেই শিশুদের অনেকেই এবার প্রথম ভোটার। শতাব্দী বলছেন, ‘এখনও রোড শো করার সময় দেখি বাচ্চাগুলো দৌড়য়। আমি আইসক্রিম কিনে দিই। খুশিতে ওরা হাত নাড়ে। এই টুকরো টুকরো ভাললাগা এবং ভালবাসা আমৃত্যু পেতে চাই।”
নতুন প্রজন্ম তাঁকে যতটা ভালবাসে, ততটাই বয়স্করাও পছন্দ করেন। আর হবে না-ই বা কেন, আট-নয়ের দশকে যাঁরা বাংলা সিনেমা দেখেছেন তাঁদের হৃদয়ে ‘শতাব্দী’ নামটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা। সেই অপাপবিদ্ধ হরিণী চোখ ভোলার নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন বেড়েছে। লেখা বা পড়ার সময় চশমা লাগে। তবে এখনও তিনি হাসলে মুগ্ধতা ভর করে। শতাব্দীর বিশ্বাস, ফ্যানরা এখনও সমানভাবে তাঁকে ভালবাসেন।শুধু সিনেমা নয়, গাঁ-গঞ্জে চুটিয়ে যাত্রাও করেছেন শতাব্দী। ফলে একটা ‘বাড়তি’ পরিচিতি ছিল। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ক্যারিশমা। কথা বলতে বলতে এসির তাপমাত্রা আরও কমিয়ে দিলেন। কিছুটা ঝুঁকে বললেন, “যখন সিনেমা বা যাত্রা করতাম-কোনও দিনও এমন কিছু করিনি, যাতে কারও খারাপ লাগে। সাংসদ হিসাবে প্রচুর কাজ করেছি। কোনও টেনশন নেই। মাথায় ঘুরে বেড়ানো শব্দগুলোকে বরং গুছিয়ে লিখে ফেলি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.