সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘রামভক্ত’দের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে তৈরি ‘সংকটমোচন হনুমান দল’। লোকসভা ভোটের মুখে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া প্রান্তিক পুরুলিয়ায় গেরুয়া শিবিরকে পর্যুদস্ত করতে এটাই তৃণমূলের হাতিয়ার।
বনমহলের এই জেলায় বিজেপি যেভাবে ‘জয় শ্রী রাম’ ও ‘জয় হনুমান’ স্লোগানে যুব সম্প্রদায়ের মন জয় করে রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তারই পালটা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের নয়া চাল এই ‘সংকটমোচন হনুমান দল’। তবে এই ব্যানারে কোথাও তৃণমূল শব্দবন্ধ বা ঘাস ফুলের প্রতীক নেই। কিন্তু এই ব্যানারের পিছনে যে শাসক দলই রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা থাকে না। জেলা থেকে বিজেপিকে হঠাতে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনাতেই এর জন্ম। কিন্তু একেবারে প্রকাশ্যে পরিষ্কার করে জেলা তৃণমূলের কোনও নেতা-কর্মীই এই বিষয়ে কিছু বলছেন না।
জেলায় যেভাবে গেরুয়া শিবির কাজ করছে, কার্যত তাদের জনপ্রিয়তা ঠেকাতে সেই ধাঁচেই একেবারে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে তৃণমূল। আরএসএসের সমবিচার সম্পন্ন সংগঠন বলে পরিচিত পূর্বাঞ্চল বনবাসী কল্যাণ আশ্রম, বিবেকানন্দ বিদ্যা বিকাশ পরিষদ, সরস্বতী শিশু মন্দির, সেবাভারতীর মতো সংগঠনগুলি রাষ্ট্র ভক্ত সমাজ নির্মাণের আড়ালে উগ্র হিন্দুত্বের বীজ বপন করছে বলে অভিযোগ। যার ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি। সেই কারণেই ঝাড়খণ্ড লাগোয়া জঙ্গলমহলের এই জেলায় গেরুয়াকে ঠেকাতে রামচন্দ্র ও হনুমানের ছবি দিয়ে ‘সংকটমোচন হনুমান দল’ গড়েছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরাই। পদাধিকারী-সহ একাধিক সদস্য পদ দিয়ে ওই দলের ব্যানারে একেবারে সন্তর্পনে হেঁশেলে ঢুকে পড়ছে শাসক দল। গেরুয়া শিবিরের মগজ ধোলাইয়ের পর তাদের কুপোকাত করতে পালটা প্রচার করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে ‘সংকটমোচন হনুমান দল’-এর ব্যানার থাকলেও রাজ্য সরকারের উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের সুবিধা-সহ তৃণমূলের কাজকর্ম তুলে ধরে আম জনতার মন জয় করছেন তাঁরা। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের এই নয়া স্ট্র্যাটেজিতে একেবারে থ হয়ে যাচ্ছে বিজেপি। এই ‘সংকটমোচন হনুমান দল’-এর অস্ত্রেই বলরামপুরে গেরুয়া শিবিরে ইতিমধ্যে ভাঙন ধরতে শুরু করেছে।
কালবৈশাখীতে বিপর্যস্ত ট্রেন চলাচল, দুর্ভোগের শিকার নিত্যযাত্রীরা
সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলে বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতি বিজেপির দখলে থাকলেও পরবর্তী কালে দু’ধাপে বিজেপির জয়ী সদস্যরা শাসক দলে আসায় ওই সমিতি তৃণমূল দখল করে নেয়। তবে শুধু বলরামপুর নয়, এর প্রভাব পড়ে শহর পুরুলিয়ার বজরং দলের ভাঙনেও। সেইসঙ্গে সাতুড়ি, পারা, আড়শা, বরাবাজারের একটা অংশ ও জয়পুরেও বিজেপিকে খানিকটা কোনঠাসা করেছে এই নয়া দল। এ সম্পর্কে সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপির কাছে আমরা হিন্দুত্ব শিখব না। সবকিছুতেই জয় শ্রীরাম। জয় শ্রীরাম স্লোগান দিয়ে বোঝাতে চাইছেন তারাই সবচেয়ে বড় হিন্দু। কিন্তু শ্রীরামচন্দ্র সবার। হনুমানের পুজো আমরা সবাই করি। কিন্তু বিজেপি ধর্মের নামে রাজনীতি করছে। তাই আমরাও এখন জয় হনুমান ও জয় শ্রীরাম বলে মানুষকে বোঝাচ্ছি, আমরা হিন্দু বলে গর্ব অনুভব করি।” তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কাজ নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ সাড়া দিচ্ছেন। যে এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের পর অন্যরকম পরিস্থিতি-পরিবেশ ছিল, এখন তা বদলে গিয়েছে। তবে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “শাসক দল তাদের হারনো জমি পেতে যা খুশি করুক না কেন, এই জেলায় আমরা মানুষের মনে গেঁথে গিয়েছি। লোকসভা ভোট তার জবাব দেবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.