সৌরভ মাজি, বর্ধমান: পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) সভাপতি মহম্মদ সাদ্দাম হোসেন। মেমারি কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের রক্তদান শিবিরের অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন, এই ইউনিটের কেউ বিরোধিতা করলে বা তাকে বাদ দিয়ে কেউ কিছু করার চেষ্টা করলে পুলিশ দিয়ে অ্যারেস্ট করাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি অভিযোগ তুলেছে, দমননীতি চালাতে পুলিশকে টিএমসিপি ব্যবহার করছে এটাই তার প্রমাণ। জেলা টিএমসিপি সভাপতির এই মন্তব্য ভাল চোখে দেখছে না রাজ্য নেতৃত্ব। তারাও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে।
[কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় প্রয়াত! গুগলের দেওয়া তথ্যে বিভ্রান্তি চরমে]
গত রবিবার মেমারি কলেজের পাশেই স্টেডিয়ামে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল টিএমসিপি। সেই কর্মসূচিতে গিয়ে মেমারি কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের সদস্য ও পদাধিকারিকদের নাম ঘোষণা করেন সাদ্দাম। মঞ্চে তখন মেমারির উপপুরপ্রধান সুপ্রিয় সামন্ত, মেমারি শহর টিএমসিপি সভাপতি তথা মেমারি কলেজের কর্মী রাকেশ শর্মা, প্রমুখ হাজির। অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষ করার পর রাকেশ সাদ্দামের কানে কানে কিছু বলেন। এরপরই সাদ্দাম ফের মাইক্রোফোন হাতে তুলে নেন। তারপর যা বক্তব্য রাখেন তা নিয়েই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সেই বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাদ্দাম বলেন, “এই ইউনিটকেই সবাইকে মানতে হবে। এই ইউনিকে বাদ দিয়ে কেউ বা বিপক্ষে গিয়ে কেউ কাজ করার কথা কেউ ভেবে থাকলে তাদের কড়া ভাষায় বলে যাচ্ছি, দরকার পড়লে, যদি কোনও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, পুলিশকে দিয়ে অ্যারেস্ট করাতে বাধ্য হব। এই ইউনিটের সঙ্গে থেকেই কাজ করতে হবে। কলেজের যাবতীয় কাজ এই ইউনিটই করবে।”
[রাজ্য মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, মন্ত্রী হচ্ছেন সুজিত বসু-তাপস রায়]
একইসঙ্গে সাদ্দাম ওই কর্মসূচিতে বলেছেন, “এই কলেজের নতুন টিএমসিপি ইউনিটের কথা কলেজের অধ্যক্ষকেও জানিয়ে দেব। এই ইউনিটকে নিয়েই কাজ করতে হবে অধ্যক্ষকেও।” বিরোধী সংগঠনের অভিযোগ, রাকেশ শর্মার সঙ্গে সম্প্রতি কলেজের অধ্যক্ষর বিবাদ চরমে উঠেছিল। রাকেশের বিরুদ্ধে প্রসাসন ও পুলিশের দ্বারস্থ হন অধ্যক্ষ ও কয়েকজন অধ্যাপক-অধ্যাপিকা। অধ্যক্ষকে হেনস্তা, অধ্যাপককে মারধর-সহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে রাকেশ ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। কয়েকজন পড়ুয়াকে বরখাস্তও করা হয়। পরে অবশ্য তাদের ফিরিয়ে আনা হয়। রাকেশ বিরোধী টিএমসিপির একটি গোষ্ঠী অধ্যক্ষর পাশে দাঁড়ায় বলে দাবি। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, সেই গোষ্ঠী ও অধ্যক্ষকেই টিএমসিপি জেলা সভাপতিকে দিয়ে ওইভাবে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শহর সভাপতি। এই বিষয়ে সাদ্দামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। টিএমসিপির রাজ্য নেতৃত্বও সাদ্দামের বক্তব্যের ওই ভিডিও পরীক্ষা করে দেখেছে। রাজ্য নেতৃত্ব জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলবে বলে সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে। দলীয় নেতৃত্ব মনে করছে, এই ধরনের মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। এটা কাম্য নয়। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরি বলেন, “গণতন্ত্র ও স্বাধিকার রোধ করা হয় এইভাবে। পুলিশকে দিয়ে দমননীতি নেওয়া হয় এই বক্তব্যে সেটা ফুটে উঠেছে।”
দেখুন ভিডিও-
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.