নবেন্দু ঘোষ, বসিরহাট: রাজ্যজুড়ে কাটমানি বিক্ষোভের রেশ থেকে বাদ যাচ্ছে না বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও৷ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে গত সপ্তাহেই ছাত্র সংগঠনের এক নেতার বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তুলে পোস্টার পড়েছিল৷ তা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও উঠেছিল৷ আর এই পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখা গেল উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ কলেজে৷ ভরতি হওয়ার জন্য কাটমানি চাওয়া দূর অস্ত, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে অর্থসাহায্য করে মেধাবী, দরিদ্র এক ছাত্রীকে ভরতি করিয়ে দেওয়া হল কলেজে৷
সুস্মিতা মণ্ডল, প্রতিমা মণ্ডল, ঝুলন মণ্ডল এবং ইমরান কয়াল৷ এই চার দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীকে কলেজে ভরতি করিয়ে তাঁদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিল হিঙ্গলগঞ্জ কলেজের ছাত্র সংগঠন৷ সোমবার এঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ভরতি সংক্রান্ত কাগজপত্র, যাতে একেবারে গোড়া থেকেই তাঁরা ক্লাস করতে পারেন৷ আর কলেজের দাদা, দিদিদের এমন অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপে স্বভাবতই খুশি প্রতিমা, সুস্মিতারা৷ অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়ে ফের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন৷
হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের ছাত্রী সুস্মিতা মণ্ডল এবার ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন৷ বাবা শ্রীপদ মণ্ডল পেশায় পান বিক্রেতা৷ মেয়ের এত ভাল রেজাল্ট সত্ত্বেও কলেজে পড়ানোর টাকা জোগাড় করে উঠতে পারেননি তিনি৷ কিন্তু টাকার জন্য মেয়ের এমন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে, তাও মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি৷ তাই হিঙ্গলগঞ্জ কলেজে গিয়ে ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে দেখা করেন শ্রীপদবাবু৷ তাঁদেরকেই সমস্যার কথা জানান৷ তখনই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা তাঁকে আশ্বস্ত করেন যে সুস্মিতার ভরতির ব্যবস্থা তাঁরা করবেন৷ এরপর সুস্মিতার সঙ্গে দেখা করে ইউনিয়নের সদস্যরা জানতে পারেন, বাংলা অনার্স নিয়ে পড়তে চান তিনি৷ সেইমতো হিঙ্গলগঞ্জ কলেজে তাঁর ভরতির ব্যবস্থা করা হয়৷ ভরতির ফি বাবদ ২২৫০ টাকা নিজেরা সংগ্রহ করে জমা দেন কলেজে৷ ভরতি হন সুস্মিতা৷ তাঁর কথায়, ‘বাবার পক্ষে কলেজে ভরতির টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছিল না৷ তাই ইউনিয়নের দাদাদের কাছে গিয়েছিলাম৷ ইউনিয়নের তরফে এই আর্থিক সাহায্য পেয়ে কলেজে ভরতি হতে পারলাম৷ দাদাদের এই উপকার চিরকাল মনে রাখব৷’
এদিকে, দুলদুলি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা প্রতিমা মণ্ডল উচ্চমাধ্যমিকে ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে৷ বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রী৷ আর্থিক অনটন নিত্যসঙ্গী৷ তাই সরাসরি হিঙ্গলগঞ্জ কলেজে গিয়েই নিজের সমস্যার কথা জানান প্রতিমা৷ তাঁর সাহায্যেও এগিয়ে আসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ৷ ভরতির ফি ১৭২০ টাকা ইউনিয়নের সদস্যরা সংগ্রহ করে দেন৷ একইভাবে ছাত্র সংগঠনের তরফে সাহায্য করা হয়েছে ইমরান এবং ঝুলনকে৷ প্রত্যেকেই প্রথম বর্ষে ভরতি হয়েছে দাদা, দিদিদের সাহায্যের হাত ধরে৷
এনিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ কলেজের টিএমসিপি-র ইউনিট প্রেসিডেন্ট ইরফান হাবিব বলেন, ‘আমরা আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্যের মধ্যে সুস্মিতাদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি৷ আরও যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদেরও যতটুকু পারি সাহায্য করব৷’ আর এভাবেই হিঙ্গলগঞ্জ কলেজের ছাত্র সংগঠন বুঝিয়ে দিল, দেশের যোগ্য ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবেই তাঁরা নিজেদের তৈরি করে তুলছেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.