সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়জয়কার৷ এরাজ্যে ১৮টি আসন নিজেদের দখলে রেখেছে গেরুয়া শিবির৷ দুর্গাপুর নগর নিগম শুধু নয় দুই বিধানসভাতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে তৃণমূল৷ হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জেলা নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েই দলের অন্দরে উঠছে প্রশ্ন৷ বেশ কয়েকজনকে বদল করার দাবি উঠল জেলা তৃণমূলের অন্দরে।
দুর্গাপুর নগর নিগমের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬৪৪, ১২ নম্বরে ১৩৫৪ ও ১৪ নম্বরে মাত্র ৭৭ ভোটে এগিয়ে তৃণমূল। বিধায়ক বিশ্বনাথ পারিয়ালের স্ত্রীর ওয়ার্ডেই সব থেকে বেশি ভরাডুবি তৃণমূলের। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৭৭৫ ভোটে পিছিয়ে শাসকদল। পিছিয়ে থাকার নিরিখে ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে এই ওয়ার্ডই রেকর্ড গড়েছে। সবচেয়ে কম ব্যবধানে হার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডে মাত্র ৩৭৬ ভোটে পরাজয় হয়েছে তৃণমূলের। খোদ মেয়রের ১১ নম্বর ওয়ার্ডেও ১৭২৩ ভোটে পিছিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। দলের অন্দরেই মাথাচাড়া দিয়েছে অসন্তোষ৷ অনেকেই বলছেন, নিগমের তাবড় তাবড় কাউন্সিলররাও দলের হয়ে ভোট করাতে চরমভাবে ব্যর্থ। ভোটের আগে দলের পর্যবেক্ষক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কাছে বুক ফুলিয়ে ওয়ার্ডে হাজার ভোটের লিড দেবে বলে জাহির করেছিলেন কাউন্সিলররা। পরিবর্তে দুর্গাপুর নগর নিগমের ৪৩টি ওয়ার্ডে বিজেপির সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া লিড পেয়েছেন ৭৩,০৩৬ ভোটে।
২০১৭ সালে দুর্গাপুর নগর নিগমের ৪৩টি আসনেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। শুধু তাই নয় সিপিএমের দখলে থাকা দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভাতেও ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। এই কেন্দ্রে ২৬,৮৬৪ ভোটে পিছিয়ে পড়েছে শাসকদল। সবাইকে চমকে দিয়েছে দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফল। এই কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বনাথ পারিয়াল। তৃণমূল থেকে কংগ্রসে গিয়ে জোটের প্রার্থী হয়ে তৃণমূলকে পরাজিত করেন তিনি। প্রায় সাতচল্লিশ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারান অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে। কিন্তু এই লোকসভা ভোটে উলটপুরাণ। এবার ওই ব্যবধানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও বিপুল সংখ্যক ভোট। তা গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতেই। তৃণমূলের ঘরের ছেলে কংগ্রেস বিধায়ক বিশ্বনাথ পারিয়ালের পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল পরাজিত হয়েছে ৫৯,৬৪২ ভোটের ব্যবধানে।
দুর্গাপুরের দুই বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূলের তরফে ভোটের দায়িত্বে ছিলেন বিশ্বনাথ পারিয়াল। সঙ্গে ছিলেন প্রভাত চট্টোপাধ্যায় ও উত্তম মুখোপাধ্যায়। এই শোচনীয় পরাজয়ের পর নেতৃত্বে বদল আনার দাবি করছেন কাউন্সিলরদের একাংশ। দুর্গাপুর নগর নিগমের মেয়র দিলীপ অগস্তি জানান, “কাউন্সিলরদের ভোট করাতে বলা হল। কিন্তু জেলা নেতৃত্বের থেকে সহায়তা পাননি কাউন্সিলররা। উচিত ছিল তাদের পাশে দাঁড়ানো। আমাদের কাছে উচ্চ নেতৃত্ব হারের ব্যাখ্যা চাইলে আমরা আমাদের মতামত জানিয়ে দেব।” যদিও কাউন্সিলরদের সহায়তা করা হয়নি এই অভিযোগ মানতে রাজি হয়নি জেলা নেতৃত্ব। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি বলেন, ‘‘কাউন্সিলররা ওয়ার্ড সভাপতি নিয়োগ করেছেন। তাঁদের দায়িত্ব ছিল সংগঠনকে আরও মজবুত করা। এই ভোটে দরকার মতো ব্লক ও জেলা নেতৃত্ব সাহায্যও করেছে। হারের দায়িত্ব নিতে হবে কাউন্সিলরদেরই।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.