সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: সময়ে কাজে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই একটি ইলেকট্রনিক্স স্টোরের ম্যানেজারের মাথায় রিভলভার ঠেকানোর অভিযোগ উঠল এক কর্মীর বিরুদ্ধে। শাসকদলের অনুগামী ওই কর্মীর এই আচরণের পর চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দুর্গাপুরের একটি শপিংমলে। শুধু রিভলভার ঠেকানোই নয়, ওই ম্যানেজারকে রীতিমতো শাসানি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ আধিকারিকরা। রবিবার অভিযুক্ত দীপক গড়াই ও তার এক সঙ্গী বিজয় সিংকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে রিভলভারটিও। এদিকে অভিযুক্তকে শাসকদলের সাধারণ সমথর্ক বলে উল্লেখ করে জেলার প্রাক্তন আইএনটিটিইউসি সভাপতি জানান, ও খেলনা বন্দুক দেখিয়ে ভয় দেখিয়েছিল।
শনিবার রাত আটটা। গমগম করছে দুর্গাপুর থানা এলাকার বেনাচিতির একটি শপিংমল। এই মলের একটি স্টোরের অধস্তন কর্মী দীপক গড়াই। কাজে ফাঁকি, কাজ ঠিক মতন না করা-সহ একরাশ অভিযোগ দীপকের বিরুদ্ধে। কিন্তু, সাহস করে কেউ কিছু বলতে পারতেন না। কারণ, দীপকের আরেক পরিচয় সে স্থানীয় শাসকদলের নেতাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
শনিবার ফের সময়মতো কাজে না আসার অভিযোগ ওঠে দীপকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে ওই ইলেকট্রনিক্স স্টোরের ডিপার্টমেন্ট ম্যানেজার সৌভিক পাল প্রতিবাদ করেন। এরপরই দীপক তার দুই সাকরেদকে সঙ্গে নিয়ে ওই স্টোরে এসে সৌভিকবাবুর কলার চেপে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর তাঁর মাথায় রিভলভার ঠেকায় বলেও অভিযোগ। এই ঘটনার পরই সৌভিকবাবু-সহ ওই স্টোরের অন্য কর্মীরা আতঙ্কিত
হয়ে পড়েন। খবর দেওয়া হয় পুলিশকেও। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আসেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের এসিপি(১) আরিশ বিলাল-সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকরা। ততক্ষণে অবশ্য ম্যানেজারকে চমকে এলাকা ছেড়ে পালায় দীপক ও তার সঙ্গীরা। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, ওই ঘটনার পর স্থানীয় ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কার্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল অভিযুক্তরা।
ওই স্টোরের ডিপার্টমেন্ট ম্যানেজার সৌভিক পাল বলেন,”আমরা সকলেই চাকরি সূত্রে বাইরে থেকে এসেছি। সংস্থা আমাকে তাদের কাজ দেখভালের জন্যেই নিয়োগ করেছে। কিন্তু, কোনও স্থানীয় অধস্তন কর্মীকে যদি অনিয়মের জন্য সতর্ক করতে গিয়ে মাথায় রিভলভার ঠেকানো হয়, প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়, তবে তো এই স্টোর চালু রাখাই মুশকিল হয়ে যাবে।”
১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলার প্রাক্তন আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই কর্মী আমাদের দলের সমর্থক মাত্র। চাকরি সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হচ্ছিল। তাই হয়তো খেলনা বন্দুক দেখিয়ে থাকবে। এই ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে দলকে বদনাম করার চক্রান্ত চলছে। তবুও এই খবর শুনে পুলিশকে বলেছি আইন আইনের পথে চলবে।”
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি(১) অভিষেক মোদি বলেন, “ওই শপিংমল থেকে ফোন পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কর্মীদের কাছ থেকে সব কথা শুনে তাঁদের সিসিটিভির ফুটেজ জমা করতে বলা হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.