বিডিও অফিসের মধ্যে উত্তেজিত অরূপ মির্ধা। ছবি: জয়ন্ত দাস
ধীমান রায়, কাটোয়া: বিডিওর সামনেই হাতাহাতি! আগ্নেয়াস্ত্রের বাঁট দিয়ে মারধর করা হল তৃণমূল কর্মীকে! কাঠগড়ায় দলেরই কর্মীরাই। এমনই কাণ্ড ঘটে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ২ বিডিও অফিসে। সেখানে মঙ্গলবার দুপুরে শাসকদলের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক মারপিট শুরু হয়ে যায়। অসহায়ভাবে নিজের চেয়ারে বসে থাকেন বিডিও চিন্ময় দাস।
জানা গিয়েছে, এদিন ঘটনার সূত্রপাত দুপুর নাগাদ। আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডারের অনুগামী স্থানীয় তৃণমূল নেতা আহমদ শামস তাবরিজ অরূপ মির্ধা বেশকিছু লোকজন নিয়ে এদিন বিডিও অফিস চত্বরে সিডিপিওর কাছে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়েছিলেন। অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের কাছে ঘুষ নিয়ে তাদের বদলি করা হচ্ছে,এই অভিযোগ তুলে অরূপ মির্ধা-সহ বেশকয়েকজন স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে বিডিওর চেম্বারে ঢুকে পড়েন অন্যান্য কিছু অভাব অভিযোগের কথা শোনাতে। জানা গিয়েছে, তার কিছুক্ষণ আগে ভাল্কি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সাদেরুল শেখ এবং আউশগ্রাম ২ ব্লক যুব তৃণমূলের কনভেনর সুমন ঘোষ বিডিওর কাছে দেখা করতে যান। অরূপ মির্ধা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর লোকজনও বিডিওর চেম্বারে ঢোকেন। বিডিওর সঙ্গে কথাবার্তার সময় বেশই উত্তেজিত ছিলেন অরূপ মির্ধা। জানা গিয়েছে তখন সুমন নামে ওই যুব তৃণমূল নেতা তাঁর মোবাইল ক্যামেরায় উত্তেজিত কথোপকথনের ভিডিও তুলতে থাকেন। বিষয়টি লক্ষ্য করেন অরূপের এক অনুগামী। আর কেন ওভাবে ছবি তোলা হচ্ছে – এই জবাবদিহি চেয়ে সুমনকে ঘিরে ধরে শুরু হয় মারধর। সাদেরুল শেখ ছাড়াতে গেলে তাঁকেও বেধড়ক মারধর শুরু হয়। বিডিওর সামনেই কার্যত দক্ষযজ্ঞ বেঁধে যায়। বেশ কিছুক্ষণ উত্তেজনা চলার পর অফিসের অন্যান্য কর্মীরা জড়ো হলে অরূপ মির্ধা লোকজনদের নিয়ে চলে যান। জখমদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। এরপর ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ।
প্রহৃত তৃণমূল নেতারা আউশগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি আবদুল লালনের অনুগামী বলে পরিচিত। এদের মধ্যে সাদেরুল শেখের চোখে গুরুতর আঘাত লেগেছে। তাঁকে উদ্ধার করে জামতাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অফিসের মধ্যেই এই মারপিটের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিডিও, পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করেছেন। এদিন এই ঘটনা ঘিরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অফিসের কর্মীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়ায়। উল্লেখ্য, আউশগ্রামে শাসকদলের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশ্য সংঘাত চলে আসছে। বিশেষ করে আউশগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি আবদুল লালনের সঙ্গে ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি অরূপ মির্ধার দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাত। অরূপ মির্ধা আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডারের অনুগামী বলে পরিচিত।
সাদেরুল শেখের দাবি, “অরূপ মির্ধা ও তার লোকজন বিডিও সাহেবকে মারধর করতে যাচ্ছিল বলে আমি আটকাতে যাই। তখন আগ্নেয়াস্ত্রের বাঁট দিয়ে আমার মাথায়,চোখে আঘাত করা হয়।” আউশগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি আব্দুল লালন এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডারের দিকেই। আব্দুল লালন বলেন,”বিধায়ক কয়েকজন দুস্কৃতী এবং দুর্নীতিগ্রস্তকে আস্কারা দিয়ে যা শুরু করেছেন এটা আমাদের কাছে লজ্জার। দলের পক্ষেও চরম ক্ষতি হচ্ছে। আমি উর্ধ্বতননেতৃত্বের কাছে আবেদন রেখেছি এভাবে আমাদের দলের সাধারণ কর্মীদের উপর হামলা যেন না হয়। একটা বিহিত করা হোক।” যদিও অরূপ মির্ধার পাল্টা অভিযোগ,”আব্দুল লালন অনুষ্ঠানের নাম করে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ৫০০০ টাকা করে দাবি করেছিল। এলাকার সাধারণ মানুষ জানতে পেরে বিডিওর কাছে নালিশ জানাতে আসেন। তখন আব্দুল লালন লোকজন পাঠিয়ে আমাদের লোকজনদের উপর হামলা চালায়।” আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডার বলেন,”কলকাতায় রয়েছি। ঠিক কী ঘটেছে জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েষা রাণী এ বলেন,” আউশগ্রাম ২ বিডিও অফিসে ঝামেলার কথা শুনেছি। মহকুমাশাসক বিষয়টি দেখছেন।” আউশগ্রাম ২ বিডিও চিন্ময় দাসকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। ফলে মতামত জানা সম্ভব হয়নি। মেসেজ পাঠালেও উত্তর মেলেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.