ফাইল ছবি
সৈকত মাইতি, তমলুক: বিরোধীদের সমস্ত প্রত্যাশায় জল ঢেলে লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরেও ঘুরে দাঁড়াল তৃণমূল। তমলুকের একটি সমবায় সমিতির নির্বাচনে সবকটি আসনেই বিপুল ভোটে জয়ী তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। রবিবার রাম-বামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে একেবারে বিরোধী শূন্য সমবায়। সবুজ আবির উড়িয়ে ফের বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়লেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক ব্লকের উত্তর সোনামুই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নিমতৌড়ি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি। নবনির্মিত জেলা প্রশাসনিক দপ্তর সংলগ্ন নিমতৌড়ি পার্শ্ববর্তী কুলবেড়িয়া, সাঁওতালচক, উত্তর নারকেলদা ও উত্তর সোনামুই-সহ প্রায় ৫টি বুথ এলাকার উপভোক্তাদের নিয়ে শুরু হয়েছিল এই সমবায় নির্বাচনের প্রক্রিয়া। বিগত দিনেও এই সমবায়ের ক্ষমতায় শাসকদল থাকলেও নতুন উদ্যমে এই সমবায় সমিতির নির্বাচন শুরু হয়।
যার ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৬৭ এবং আসন সংখ্যা ৯ টি। কিন্তু একটি আসন সংরক্ষণের গেরোয়ে কোন পক্ষের পক্ষ থেকে প্রার্থী দেওয়া না গেলেও বাকি ৮টি আসনেই প্রার্থী দেয় শাসক দল ও প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে বিজেপি। এদিকে ৪টি আসনে প্রার্থী দিতে সক্ষম হয় বামেরা। এমন অবস্থায় এই এলাকায় বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচন ও লোকসভা নির্বাচনে মোটের উপর ফলাফল অনুকূলে থাকায় প্রায় সর্বশক্তি দিয়ে এই নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে বিজেপি। অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে এই সমবায় সভাপতি নির্বাচিত ছিল শাসকদলের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। এভাবেই টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে রবিবার সকাল থেকেই কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া। সমবায় সমিতি সংলগ্ন নিমতৌড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচনী ক্ষেত্র তৈরি করে শুরু হয় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া।
ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় একেবারেই বিরোধীশূন্য করে ৮ টি আসনেই বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বিজেপি ও বামেরা একটি আসনে খাতা খুলতে পারেনি। আর সেই আনন্দেই সবুজ আবির নিয়ে অকাল হোলি খেলায় মেতে ওঠেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। প্রসঙ্গত, বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তমলুকের এই উত্তর সোনামুই গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ১৯ বুথের মধ্যে ১০টি আসনে পরাজিত হয় শাসক দল তৃণমূল। হাতছাড়া হয় সোনামুই গ্রাম পঞ্চায়েতটি। লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে ঘটে বিপর্যয়। বাদ যায়নি এই উত্তর সোনামুই গ্রাম পঞ্চায়েতেও। এগিয়ে থাকে বিজেপি। মাত্র অল্প সময়ের ব্যবধানে এই সমবায় নির্বাচনে শাসকদলের এভাবে ‘কামব্যাক’ যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে দাবি কর্মী-সমর্থকদের।
এ বিষয়ে এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব তথা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ বেরা বলেন, “বিগত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে সাময়িকভাবে ফলাফল খারাপ হওয়ার পর এই সমবায় সমিতির নির্বাচন যথেষ্ট আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু আমরা সেই প্রচেষ্টায় উন্নয়নের পক্ষে মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। যার ফলাফল হিসেবে ডানপন্থীদের দুর্গ হিসেবে এই এলাকার সমবায় নির্বাচনে ফের তৃণমূল প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই জয় দলীয় কর্মী সমর্থকদের মনোবল অনেকটাই চাঙ্গা করবে। মানুষ উন্নয়নের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছেন।”
যদিও বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ সভাপতি আশিস মণ্ডল বলেন, “এমনিতেই শাসকদল সমবায় নির্বাচনে ভোটার তালিকায় গরমিল করে রেখেছিল। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের কর্মী সমর্থকদের পরিকল্পিতভাবে চক্রান্ত করে ভোটদান প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে এই ভোটে কোনওভাবেই জনরায় প্রতিফলিত হয়নি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.