সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: নন্দীগ্রামের শহিদ সভামঞ্চ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। কার্তিক বারিক, গৌরাঙ্গ মণ্ডল, সঞ্জীব মণ্ডলকে খেজুরি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মেঘনাদ পাল-সহ বাকিরা এখনও পলাতক। তাঁদের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ। ওইদিনের ঘটনায় মূল পরিকল্পনা ও চক্রান্তের অভিযোগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। শুধু তাই নয়, শুভেন্দুর এই পরিকল্পনায় যারা জড়িত বিজেপির সেই ২১ নেতার বিরুদ্ধেও পুলিশে এফআইআর (FIR) করেছে কমিটি। পুলিশবাহিনী ইতিমধ্যেই শহিদ স্মরণ মঞ্চ পোড়ানোয় অভিযুক্ত মেঘনাদ পাল, অশোক করণ, শ্যামাপদ মাইতিদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু করেছে।
শহিদ সভামঞ্চ পুড়িয়ে দেওয়ার পিছনে যে রাজ্যের বিরোধী দলনেতাই রয়েছেন, তা বুঝিয়ে দিয়ে এদিন পুলিশে এফআইআর করেন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সীতারাম করণ। ঘটনায় ২১ জনের নামে এফআইআর হয়েছে। তাঁরা সকলেই বিজেপির বলে অভিযোগ। দোষীদের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার এই অভিযোগ করেছেন। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা অধিকাংশ গোকুলনগর পঞ্চায়েতের পারুলবাড়ি, মহেশপুর, গোকুলনগর, জামবাড়ি, শিমুলকুণ্ড গ্রামের বাসিন্দা। অভিযোগপত্রে বিজেপির (BJP) নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের দক্ষিণ মণ্ডল সভাপতি শ্যামাপদ মাইতি-সহ স্থানীয় বিজেপি নেতা মেঘনাদ পাল, অশোক করণের নাম রয়েছে। ঘটনার পিছনে যে পূর্বপরিকল্পনা ছিল তারও উল্লেখ রয়েছে অভিযোগে।
এফআইআর করার পর নন্দীগ্রাম ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ জানিয়েছেন, “রাজ্য সরকার ও পুলিশের উপর আস্থা রয়েছে। কারণ, বাংলায় প্রকৃত আইনের শাসন রয়েছে, শাসকের আইন নেই। তাই শহিদদের মঞ্চ পোড়ানোর অভিযুক্তরা দ্রুত গ্রেপ্তার হবে বলে আমাদের স্থির বিশ্বাস।” শনিবার বিকেলে কলকাতায় তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) অভিযোগ, “বিজেপিতে ধস নামায় ভয় পেয়ে গিয়ে শান্ত নন্দীগ্রামকে অশান্ত করতে শুভেন্দু ঝগড়া-মারামারি ও হিংসার ইন্ধন দিচ্ছে। আগুন দিতে দেখা ফেলা তৃণমূল (TMC) কর্মী গোপাল গায়েনকে খুনের চেষ্টা হয়েছে। তাই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে অভিযুক্ত শুভেন্দুকে।’’ এরপর তিনি বলেন, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের ক্ষোভকে মর্যাদা দিতে হবে। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির এই দাবিকে তৃণমূল সমর্থন করছে বলেও জানান তৃণমূল মুখপাত্র।
এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, মঞ্চে আগুন দিয়ে বাইক চেপে পালানোর সময় দুষ্কৃতীরা সদর্পে হুঙ্কার দিয়েছিল। বলেছিল, ‘‘নেতৃত্বের পরামর্শমতো ওদের সভামঞ্চ পুড়িয়ে দিয়েছি। এটা দাদাকে বলে দে।’’ অভিযোগ পত্রে এই ‘দাদা’ বলতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন অভিযোগকারী। শুক্রবার করপল্লিতে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি ও তৃণমূল কংগ্রেসের যৌথ অবস্থান বিক্ষোভেও সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট করেছেন করেছিলেন নেতারা। যদিও এফআইআরে সরাসরি শুভেন্দুর নাম নেওয়া হয়নি। শুক্রবার বিকেলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে তৃণমূলের তরফে দাবি ছিল সোমবারের মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। এদিন দিনভর গোকুলনগরে অভিযুক্তদের বাড়ি-সহ বেশ কিছু জায়গায় তল্লাশি করেছে পূলিশ। কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ জানান, ‘‘আইনের প্রতি আস্থা আছে। দোষীরা কেউ পার পাবে না। আমরাও মানুষের শক্তিতে বলীয়ান। মানুষকে সঙ্গে নিয়েই নন্দীগ্রামে বিজেপির সমস্ত কুকীর্তির জবাব দেব।’’ বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও করপল্লির শহিদ স্মরণ সভামঞ্চ পোড়ার পিছনে তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছেন। যদিও এর জবাব দিয়ে পাল্টা বাপ্পাদিত্য গর্গ জানিয়েছেন, ‘‘বিজেপির পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। ১০ নভেম্বর শহিদ দিবসে স্বতস্ফূর্তভাবে হাজার হাজার নন্দীগ্রামবাসী ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভায় যোগ দিয়েছিল। তাই ভয় পেয়ে, আতঙ্কিত হয়ে বিজেপি শহিদ স্মরণ মঞ্চে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। মানুষ এর জবাব দেবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.