ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: পার্টি অফিস বলতে কোন ছবি প্রথম চোখে ভাসে? গুরুগম্ভীর পরিবেশ, রাশভারী রাজনৈতিক আলোচনা, মিটিং। স্কুলের কচিকাঁচারা তো দূর, সাধারণ কলেজ পড়ুয়ারা পর্যন্ত পার্টি অফিসে সচরাচর ঢোকার সাহস দেখায় না। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনার বিলকান্দা এক নম্বর পঞ্চায়েত এলাকায় পার্টি অফিসের সংজ্ঞা যেন একেবারেই আলাদা। বিকেল হলেই সেখানে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে একঝাঁক স্কুল পড়ুয়া। কেউ ক্লাস ফাইভ, কেউ সিক্স। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের পড়ুয়ারাও রয়েছে সেই তালিকা।
বিষয়টি শুনতে অবাক লাগলেও একেবারেই বাস্তব। কারণ বিলকান্দার ১ পঞ্চায়েতের মহিষপোতায় তৃণমূলের পার্টি অফিসটি এলাকার বাচ্চাদের কাছে কম্পিউটার সেন্টার হিসাবে পরিচিত। মহিষপোতা-সহ আশপাশের অঞ্চলগুলির ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা খরচে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সেখানে। বিলকান্দা ১ যুব তৃণমূলের উদ্যোগে তিন বছর আগে চালু হয়েছে সেটি। প্রতিবছর প্রায় শ’খানেক পড়ুয়া সেখান থেকে কম্পিউটারের প্রাথমিক শিক্ষা পায়। এবং কোর্স শেষে প্রত্যেককে সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়।
খড়দহ বিধানসভা এলাকার বিলকান্দা এক নম্বর পঞ্চায়েতের মহিষপোতায় পার্টি অফিসের দোতলায় আলাদা ঘর তৈরি করা হয়েছে এই কম্পিউটার সেন্টারের জন্য। ওই এলাকার যুব তৃণমূল কর্মীদের দাবি, শুধু মহিষপোতা নয়, বোদাই, কর্ণমাধবপুর, ভাটপাড়ার মতো গ্রামের থেকে স্কুল পড়ুয়ারা এই পার্টি অফিসে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিতে আসে। ওই এলাকার অধিকাংশ পরিবারই গরিব। তাই ছেলেমেয়েকে আলাদ করে কম্পিউটার শেখানোর মতো সামর্থ্য অনেকেরই নেই। ওই এলাকার যুব তৃণমূলের সভাপতি প্রবীর দাস ওরফে বাবাই বলেন, “এখন যে কোনও চাকরি বা কাজের ক্ষেত্রেই কম্পিউটার প্রয়োজন। সে কারণেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির ভাবনা আসে। বিষয়টি এলাকার বিধায়ক তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে জানানো হয়। তাঁর সহযোগিতা ছাড়া কোনওভাবেই সম্ভব হত না।”
বিধায়ক তহবিল থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা অনুদানে পার্টি অফিসের দোতলায় এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হয়। বর্তমানে আটটি কম্পিউটার ও দু’জন ট্রেনার নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি চলছে। বুধ এবং বৃহস্পতিবার বাদে সপ্তাহে পাঁচদিন সন্ধ্যায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কুড়ি জনের ব্যাচ হয়। কম্পিউচার সেন্টারের ট্রেনার অমিত সিংহরায় জানিয়েছেন, এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের বেসিক এবং ডিটিপির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এক কথায় বলতে গেলে প্রাথমিক শিক্ষাটি তারা এখানে পেয়ে যায়।
বারাকপুর এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুপ্রিয়া ঘোষ বলেন, “বিধায়ক তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র আমাদের বলেছিলেন, যে কোনও শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুদক্ষিণা থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। সেটা এক টাকাও হতে পারে। সেই কথা মাথায় রেখেই আমরা সামান্য কিছু অর্থ ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” স্থানীয় যুব তৃণমূলের কর্মীদের থেকে জানা যায়, ভর্তির সময় কুড়ি টাকা নেওয়া হয়। তবে সেটি বাধ্যতামূলক নয়। যদিও কেউ অপারগ হন, তাঁর ক্ষেত্রে ছাড়ও দেওয়া হয়ে থাকে। যুব তৃণমূলের কর্মীদের দাবি, যেহেতু দলের তরফে কোনও প্রশিক্ষণের সংশাপত্র দেওয়া যায় না, তাই সমাজকল্যাণ সংঘ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। সেই সংগঠনের নামেই কম্পিউটার সেন্টারটি চলে।
বর্তমানে ওই কম্পিউটার সেন্টারে প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, ওই এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুলে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ চালু হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিছু জায়গায় কম্পিউটার বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে ক্লাস বন্ধ, তো কোথাও ট্রেনারের অভাবে। এলাকাবাসীর দাবি, তৃণমূল কর্মীরা এই উদ্যোগ না নিলে গ্রামের পড়ুয়ারা কম্পিউটারে অজ্ঞই থেকে যেত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.