ফাইল ছবি
পলাশ পাত্র, তেহট্ট: কাটমানি, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ নিয়ে টানাপোড়েন চলছে শাসকদলের অন্দরে। তার মাঝে শুক্রবার তিনটের সময় নদিয়ার দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। লোকসভা ভোটের পর প্রথমবার তৃণমূল ভবনে যেতে হবে ভেবে নেতার চিন্তায় জেলার নেতারা। কারণ, লোকসভা ভোটে নদিয়ার ফল সন্তোষজনক হয়নি। তাই দলনেত্রীর রোষানলে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
জানা গিয়েছে, জেলার বিভিন্ন স্তরের ৫০০ জন নেতা-নেত্রী এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। সেই তালিকায় রয়েছে পঞ্চায়েত প্রধান, অঞ্চল সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলা পরিষদ সদস্য, ব্লক সভাপতি, পুরপ্রধান, উপপুরপ্রধান, বিধায়ক, সাংসদ, বিভিন্ন শাখা সংগঠনের সভাপতিরা। তাঁদের তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেয়, সেটাই এখন দেখার।
প্রসঙ্গত, দুদিন আগে রাজ্যের পুরসভার কাউন্সিলারদের সঙ্গে বৈঠকে কাটমানি, স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি নিয়ে কড়া বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর কাটমানি ফেরত দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় গন্ডগোল শুরু হয়েছে। কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে ওই মিটিং বয়কট করেন তৃণমূল ছয় কাউন্সিলার। তাঁদের অভিযোগ, প্রাক্তন পুরপ্রধান ব্যক্তিস্বার্থে পুরসভার জমিতে অবৈধ ভাবে পেট্রল পাম্প করছে। বিষয়টি প্রশাসনিক স্তর থেকে দলীয় নেতাদেরও জানান হয়েছে। কিন্তু, কোনও ব্যবস্থা না হয়নি।
লোকসভায় এই পুরসভা এলাকাতে বিজেপির থেকে সাতাশ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। আর কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রায় চুয়ান্ন হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছে। লোকসভায় নদিয়ার দুটি আসনের মধ্যে রানাঘাটে প্রায় দু’লাখ ৩৩ হাজার ভোটে বিজেপির কাছে হেরেছে তৃণমূল। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল জয়লাভ করলেও বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া তেহট্ট, কৃষ্ণনগর দক্ষিণ ও কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে পিছিয়ে থাকায় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদিয়ায় পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা এলাকায় একাধিক স্তরের নেতৃত্বের ওপর সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। তাদের মোজাইক করা বাড়ি, জমি, গাড়ি, গলায় মোটা সোনার চেন, দামী পাথরের আংটি থেকে হাবভাব। কোনওটাই ভালো চোখে দেখেনি মানুষ। তাদের বক্তব্য, যাঁদের কিছু ছিল না, তাঁরা আচমকা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছে।
তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের ধারণা, এতেই মানুষের থেকে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ধর্মীয় মেরুকরণই যে শুধু বিজেপির ভোট বাড়িয়েছে এমনটা নয়। বিভিন্ন স্তরের নেতাদের উপর বিরক্ত হয়ে বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছে মানুষ। তাই লোকসভা ভোটের পর নেতৃত্বেও বদল ঘটিয়েছেন নেত্রী। কাজ ও নজরদারির সুবিধার্থে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভাওয়াড়ি নদিয়ায় দুটি সভাপতি হয়েছে। কৃষ্ণনগর, রানাঘাটে যথাক্রমে সভাপতি হয়েছেন মহুয়া মৈত্র ও শংকর সিং। কিন্তু, তারপরও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিজেপিতে যোগদান করছেন। বিভিন্ন সূত্রের খবর, তৃণমূলের নেতারা বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এদিকে নেত্রী দলের শুদ্ধিকরণ করতে চান। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যাঁরা যেতে চান, তাঁরা চলে যেতে পারেন। সেই সুরে নদিয়ায় এসে দলের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে কাটমানি থেকে শুদ্ধিকরণ নিয়ে কড়া বার্তা দেন।
এখন শুক্রবারের বৈঠকে নদিয়ার মতো জেলাতে বিজেপি কী ভাবে এত ভোট পেল ? বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা পাওয়ার পরও কীভাবে মতুয়া ভোটে ধস নামল? কীভাবে গ্রামীণ এলাকার মানুষ বা নম:শূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ মুখ ফেরাচ্ছে তৃণমূল থেকে? এ প্রশ্ন যদি তৃণমূল সুপ্রিমো করে বসেন, তাহলে কী উত্তর দেবেন? ভাবতেই ব্যস্ত নেতারা!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.