নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: রাত পোহালেই ঠাকুরনগরে মতুয়া মহাসংঘের বাড়িতে মূল ভবনে পা রাখতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর আগমন উপলক্ষে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে। মঞ্চ বাঁধা, হেলিপ্যাড তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এরই মধ্যে শুক্রবার মোদিবিরোধী মিছিলে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ঠাকুরনগর। এদিন কয়েক হাজার তৃণমূল কর্মী,সমর্থক ‘নরেন্দ্র মোদি দূর হঠো’ এবং ‘এনআরসি মানছি না, মানবো না’ স্লোগান তুলে মিছিল করলেন। তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের নেতৃত্বে কয়েক হাজার কর্মী, সমর্থক এদিন ঠাকুরনগর স্টেশন থেকে মিছিল শুরু করেন। মিছিলের স্লোগান একটাই – ‘মোদি তুমি দূর হঠো। তোমার তৈরি জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ আমরা মানছি না, মানবো না।অবিলম্বে এনআরসি বাতিল করতে হবে।’
[ পেট্রল ছাড়াই চলবে বাইক, দিশা দেখালেন নদিয়ার স্কুল মাস্টার]
এই মিছিল নিয়ে ঘৃণ্য চক্রান্তের অভিযোগ তুলে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, প্রথমে মাঠ, তারপর গাছ, তারপর পরিকল্পিতভাবে বাস বন্ধ রেখে কোনও ফল পায়নি তৃণমূল। এখন মিথ্যা অভিযোগ তুলে শেষপর্যন্ত মিছিল করছে। তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মন্তব্য, ‘শুধুমাত্র মোদিকে দেখার জন্যই কিছু লোক আসবেন। প্রধানমন্ত্রীর আসা নিয়ে মতুয়াদের কোনও হেলদোল নেই। মিথ্যা গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।’ তাঁর এই বক্তব্য খণ্ডন করে পালটা বিজেপির শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘মতুয়াদের ডাকেই প্রধানমন্ত্রী আসছেন। মতুয়াদের নিয়ে শনিবার ইতিবাচক বার্তা দেবেন তিনি।’ মোদির সভার নিরাপত্তায় এদিন ভারতীয় বায়ুসেনার দুটি হেলিকপ্টার মহড়া দিল ঠাকুরনগরের আকাশে। পাশাপাশি বিজেপি নেতা মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয় সভাস্থল পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সভা ঠাকুরবাড়ির অন্দরে এসব কাজিয়ার মাঝেই নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ঠাকুরনগরের বাইরের মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন। নাগরিক হিসেবে এদেশে থাকার অধিকার এবার মিলবে বলে আশাপ্রকাশ করছেন তাঁরা। বছর আশির রাজবল্লভ সরকার। বাবা অসীম সরকার ছিলেন জনপ্রিয় কবিগান শিল্পী। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বনগাঁর নয়া কামার গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৫৬ সালে বর্তমান বাংলাদেশ থেকে নিজের পৈতৃক ভিটেবাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন এদেশে। এখানেই বানিয়ে নিয়েছিলেন নিজের অস্থায়ী বাসস্থান। তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর সভার আগেরদিন ঠাকুরবাড়ির কামনা সাগরের পাড়ের মাঠে পৌঁছে গিয়েছিলেন স্ত্রীর সঙ্গে, তাঁর সভাস্থল পরিদর্শন করতে। ভক্তিভরে ঠাকুরনগরের ঠাকুর বাড়িতে গিয়েছেন বহুবার। বহু সংগ্রামের সাক্ষী তিনি। কিন্তু এবার ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। আশা, এবার হয়তো প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে তাঁদের এদেশের থাকার নাগরিকত্ব মিলতে পারে। বললেন, ‘রাজনীতি বুঝি না বাবা। তবে ২০১৯-এ ঠাকুরনগরের মাটি ধন্য হচ্ছে, মতুয়াদের ডাকে ২ তারিখ ঠাকুরনগরে আসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এবার আমাদের লক্ষ্যপূরণ হবে। মিলবে এদেশে থাকার অধিকার।’
[প্রেমিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতেই আত্মঘাতী কলেজ ছাত্রী]
একই কথা সুদূর বর্ধমান থেকে আসা স্বপন গোঁসাই কিংবা বলাই রায়ের। রাজবল্লভ বাবুর মতো এঁরাও সকলে মতুয়া। প্রত্যেকের একই আশা। এবার মিলবে নাগরিকত্ব। তাঁরা বলেন, ‘মতুয়ারা চায় নাগরিকত্ব, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা।’ ইতিমধ্যেই নাগরিকত্ব ইস্যুতে তৃণমূল-বিজেপির কাজিয়া তুঙ্গে। এদেশে বসবাসকারী মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজনকে নাগরিকত্ব প্রদানের আশ্বাস দিয়ে তৃণমূলের মতুয়া ভোটব্যাংকে ধস নামাতে চাইছে বিজেপি। ২ তারিখের সভা থেকে মতুয়া ভোট নিজেদের অনুকূলে আনতে কোনও ইতিবাচক ঘোষণা করার সম্ভাবনা নরেন্দ্র মোদির। তা শোনার অপেক্ষায় রাজবল্লভ সরকার, স্বপন গোঁসাই, বলাই রায়রা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.