জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: দীর্ঘদিন ধরেই তাঁকে নিয়ে দলের অন্দরে অসন্তোষ মাথাচাড়া দিচ্ছিল৷ ক্ষোভ জমছিল দলের একাংশের মধ্যে৷ যার জেরে অবশেষে দলের তরফে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হল বনগাঁ পুরসভার প্রধান শংকর আঢ্যকে৷ রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে একথা ঘোষণা করলেন পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ৷ তিনি বলেন, “ওকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” যদিও এই বিষয়ে মুখ খোলেননি শংকর আঢ্য৷ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তা সম্ভব হয়নি৷
[ আরও পড়ুন: কোলিয়াড়ি অঞ্চলের ‘সরকার ডাক্তার’-ই গরিবদের ‘অগ্নিশ্বর’ ]
জানা গিয়েছে, বনগাঁ পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টি রয়েছে তৃণমূলের দখলে৷ কিন্তু তাও এবারের লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ পুরসভা এলাকায় বিজেপির থেকে প্রায় কুড়ি হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল৷ এই আসনটিও হাতছাড়া হয়েছে শাসক দলের৷ বিজেপি এখানে তাঁদের জমি শক্ত করেছে এবং আসনটি শাসকের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে৷ সূত্রের খবর, এরপরই বনগাঁ পুরসভায় শাসকদলের অন্তর্কলহ প্রকাশ্যে এসেছে৷ দুই দফায়, প্রথমে ১১ জন ও তারপর ৩ জন, মোট ১৪ জন কাউন্সিলর পুরপ্রধান শংকর আঢ্যর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছে৷ তাঁদের অভিযোগ, পুরপ্রধানের অনৈতিক কাজকর্ম, স্বৈরাচারী মনোভাব এবং স্বজনপোষণ লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ভরাডুবির একমাত্র কারণ৷ বনগাঁ পুরসভার উপপুরপ্রধান কৃষ্ণা দেবীর অভিযোগ, “এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন সত্ত্বেও লোকসভায় বিপর্যয়ের কারণ পুরপ্রধানের ভাবমূর্তি।” কাউন্সিলর অভিজিৎ কাপুরিয়া, মনোতোষ নাথ, সুমঞ্জনা মুন্সি জানান, “ভোটের ফল বেরোনোর পর বনগাঁর মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলে জানতে পেরেছি, পুরপ্রধানের ক্রিয়াকলাপে এলাকার সকলেই ক্ষুব্ধ। সে কারণেই ভোটে আমাদের এভাবে হার হয়েছে।”
[ আরও পড়ুন: উত্তরে বর্ষা, দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি আবহাওয়া দপ্তরের ]
স্থানীয় সূত্রে খবর, দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, শেষমেশ ময়দানে নামতে হয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে৷ সমস্যা মেটাতে গত বুধবার কাউন্সিলরদের নিয়ে বারাসত জেলা পরিষদ ভবনে বৈঠকে বসেন জেলা তৃণমূলের নেতারা৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। জানা গিয়েছে, জেলা সভাপতির সামনেই শংকর আঢ্যর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন কাউন্সিলররা৷ তার সমস্ত কৃতকর্ম তুলে ধরেন তাঁরা৷ বৈঠক শেষে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “কাউন্সিলরদের মতামত শুনেছি। গোটা বিষয়টি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে জানানো হচ্ছে। উনি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।” সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার অন্যান্য পুরসভাগুলির মতো, বনগাঁ পুরসভার দিকেও নজর রয়েছে বিজেপির৷ শাসকদলে অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে যাতে তারা ভাঙন ধরাতে না পারে, সেকারণেই শংকর আঢ্যকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.