ধীমান রায়, কাটোয়া: প্রায় দশমাস আগে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারে এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে অপহরণ ও ‘মুক্তিপণ’ আদায়ের ঘটনায় নাম জুড়ল তৃণমূল বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর। অপহরণ মামলায় ভাতারের বিধায়ককে অভিযুক্তদের তালিকায় যুক্ত করার নির্দেশ দিল আদালত। অভিযোগকারী ব্যাঙ্ক ম্যানেজার শ্যামাশিস হাজরা এনিয়ে কয়েকমাস আগে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন। তারই ভিত্তিতে আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে বলে খবর। যদিও ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী বলেন, “ওই ঘটনার সময় আমি এলাকাতেই ছিলাম না। এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।”
ঘটনাটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকের। ভাতার বাজারের কদমতলার বাসিন্দা শ্যামাশিস হাজরা ও তাঁর এক সঙ্গী বাদশাহি রোড ধরে ভাড়া করা চারচাকা গাড়িতে মঙ্গলকোটের কাশেমনগরের দিকে যাচ্ছিলেন। বাদশাহি রোডে মুরাতিপুর বাসস্ট্যান্ড পার হতেই ৬-৭ জন ওই গাড়িটি আটকায়। দুজন গাড়িতে উঠে পড়ে। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে নিয়ে গিয়ে দুজনকে আটকে রাখা হয়। সঙ্গীকে পরে ছেড়ে দিলেও ব্যাঙ্ক ম্যানেজার শ্যামাশিসবাবুকে আটকে মারধর করে চার লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে তবেই ছাড়ে। পরবর্তীতে ওই ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মুক্তিপণের টাকাও উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনার মাস দেড়েক পর মঙ্গলকোটের এক বধূ শ্যামাশিস হাজরার বিরুদ্ধে কাটোয়া আদালতে মামলা দায়ের করেন। বধূর দাবি ছিল, শ্যামাশিস হাজরা চাপ দিয়ে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছিলেন। অপহরণ কাণ্ডে ধৃতদের দাবি ছিল ওই মহিলা তাঁদের কাছে বিষয়টি জানানোর পর তারা ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিল। ওই গৃহবধূর অভিযোগের ভিত্তিতে শ্যামাশিস হাজরাকে গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রায় দেড় মাস জেলহেফাজতে থাকার পর জামিনে ছাড়া পান তিনি। এর পর তিনি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালতের কাছে তার অভিযোগ ছিল, সেসময় ভাতার থানার পুলিশ যথাযথ তদন্ত করেনি। এছাড়া অপহরণের ঘটনায় বিধায়ক তাকে চাপ দিচ্ছিলেন বিষয়টি নিয়ে আপোষ মীমাংসা করে নিতে, এমনটাও জানিয়েছিলেন তিনি।
সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত শুনানির সময় প্রশ্ন তোলেন অপহরণের মামলায় মুক্তিপণ আদায় করা হলেও তার নির্দিষ্ট ধারা কেন যোগ করা হয়নি? অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? যদিও সরকারপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, “এটা রাজনৈতিক গণ্ডগোল। বিধায়কের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরেই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” দুইপক্ষের মতামত শোনার পর বিচারপতি নির্দেশ দেন, ওই মামলায় ভাতারের বিধায়কের নাম যুক্ত করতে হবে। পরবর্তী শুনানির সময় মামলার কেস ডাইরি দাখিল করতে হবে। এবিষয়ে বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী বলেন, “শ্যামাশিস হাজরা বিজেপির এক সক্রিয় কর্মী। এলাকায় সবাই সেটা জানেন। আমি ঘটনার দিন বিধানসভায় ছিলাম। রাজনৈতিক কারণেই মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.