ছবি: প্রতীকী
পলাশ পাত্র, তেহট্ট: করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের বাদ্যি বেজে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। উৎসব মিটেছে, এবার শাসক-বিরোধী দুই শিবিরই জোরকদমে প্রচার শুরুর প্রস্তুতিতে কোমর বাঁধছে। শুরু হয়েছে দেওয়াল দখলের লড়াই। একই সঙ্গে চলছে তৃণমূল, বিজেপি এবং সিপিএমের সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে জল্পনা।
প্রয়াত অনিল বিশ্বাসের বসতভিটে করিমপুর একসময় সিপিএমের ‘শক্ত ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৭২ সালে কংগ্রেস নেতা অরবিন্দ মণ্ডল করিমপুর থেকে বিধায়ক হন। তারপর দীর্ঘ ৩৯ বছর কোনও ডানপন্থী বিধায়ক পায়নি এই কেন্দ্র। ২০১৬ সালে সিপিএমের সমর ঘোষকে হারিয়ে করিমপুরের বিধায়ক হন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। তিনি প্রায় ১৬ হাজার ভোটে সিপিএম প্রার্থী সমর ঘোষকে পরাজিত করেন। মহুয়া মৈত্র এবছর লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের সাংসদ হয়েছেন। ফলে করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রটিতে উপনির্বাচনের প্রয়োজন পড়েছে। ২০১৬ সালের আগে পর্যন্ত এই কেন্দ্রে মূল লড়াই ছিল সিপিএম বনাম কংগ্রেস। এখন দিন বদলেছে, এবারের উপনির্বাচনের মূল লড়াই তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটের নিরিখে করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির থেকে ১৪ হাজার ভোটে এগিয়ে তৃণমূল।
এই কেন্দ্রে প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। তৃণমূলের তরফে অভিনেতা সোহম, সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী থেকে জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দীপক বসু, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি বাণী রায়ের নাম ভেসে উঠছে। এছাড়াও রয়েছে একাধিক হেভিওয়েটের নাম। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ অবশ্য আর বহিরাগত প্রার্থী চাইছেন না। বরং তাঁরা চাইছেন ভূমিপুত্র জুলফিকার আলি খানকে প্রার্থী করা হোক। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে সামনে রেখে প্রচারও করছে শাসকদলের একাংশ।
করিমপুরে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে ১৭ জনের নাম রাজ্যে দপ্তরে গিয়েছে বলে জানা গেছে। পঞ্চায়েত প্রধান থেকে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা সকলেই প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে আছেন। প্রাক্তন বিধায়ক সমর ঘোষ, নেত্রী অজিতা রায়, আরাধনা বিশ্বাসদের সঙ্গে রয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদক নিলয় সাহা ও বিজেপির রাজ্য নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের নামও। লড়াইয়ে কিছুটা এগিয়ে জয়প্রকাশ মজুমদার। এ প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার বলেন, “আজকালের মধ্যে দিল্লি থেকে দল প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেবে। আমরা সতেরোজনের নাম পাঠিয়েছি।” স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রার্থীর নামের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি নয়। করিমপুরের এক তৃণমূল ব্লক সভাপতি তরুণ সাহা বলেন, “ভোটের দিন ঘোষণার পরই আমরা দেওয়ালে চুনকাম শুরু করে দিয়েছি। প্রার্থী যেই হোক, শুধু নাম ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছি। তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ব।” সিপিএম সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বাম প্রার্থী ঠিক হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কংগ্রেসের সবুজ সংকেত মিললেই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার রয়েছে দু লক্ষ চল্লিশ হাজার চারশো আঠাশ জন। গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮৭ হাজার ৫১৩। বিজেপির ৭৩ হাজার ১৭৩, কংগ্রেসের ২২ হাজার ০৯৭ ও সিপিএমের ১৭ হাজার ৬০৯। অর্থাৎ কংগ্রেস সিপিএমের মিলিত ভোট ৩৯ হাজার ৭০৬। প্রসঙ্গত গত বিধানসভায় সিপিএম প্রার্থী সমর ঘোষকে প্রায় ১৬ হাজার ভোটে পরাজিত করে বিধায়ক হন মহুয়া মৈত্র। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে সিপিএম পেয়েছিল ৭৫ হাজার ভোট। গত বিধানসভায় বিজেপির এই কেন্দ্রে ভোট ছিল ২৩ হাজার ৩০২। অর্থাৎ বিধানসভা ভোটের থেকে লোকসভায় প্রায় পঞ্চাশ হাজার ভোট বাড়িয়েছে বিজেপি। গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে কংগ্রেস-সিপিএম জোটের ৩৭৩০০ ভোট কমেছে। আর শুধু সিপিএম ধরলে প্রায় ৫৮ হাজার ভোট কমেছে তাদের। লোকসভা ভোটে সারা রাজ্যে রাম-বাম জোট নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু হওয়ার আগেই গত পঞ্চায়েত ভোটে করিমপুর এলাকায় অলিখিতভাবে রাম-বাম জোট হয়। বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম-বিজেপির একসঙ্গে দেওয়াল লিখন, পতাকাও দেখা গিয়েছিল। এখন দেখার উপনির্বাচনে কোন সমীকরণ কাজ করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.