রাহুল চক্রবর্তী: লোকসভা নির্বাচনে অভূতপূর্ব জয়ের পর বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের সংগঠনে ভাঙন ধরিয়েছিল বিজেপি। একের পর এক পুরসভা দখল করে নিয়েছিল গেরুয়া শিবির। নেপথ্যে ছিলেন দাবাং নেতা অর্জুন সিং। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই উলটপুরাণ। ধীরে ধীরে গেরুয়া দখলমুক্ত হয়েছে শিল্পাঞ্চলের পুরসভা। এবার সাংসদ অর্জুন সিংয়ের গড়ে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ তৃণমূলের। ঘাসফুল শিবিরে ফিরছেন ভাটপাড়া পুরসভার ১২ জন কাউন্সিলর। লোকসভার পরপরই তাঁরা বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের দাবি, কাউন্সিলরদের মোহভঙ্গ হয়েছে। তারা বিজেপিতে ভাল ছিলেন না, তাই ফিরে আসছেন। এদিনই কাউগাছি ও পানপুর পঞ্চায়েতের একাধিক সদস্য তৃণমূলে ফিরলেন।
বুধবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে ভাটপাড়ার পটপরিবর্তনের কথা বলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জগদ্দলের বিধায়ক পরেশ দত্ত। ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ‘১২ জন কাউন্সিলর তৃণমূলে ফিরছেন। ওদের ভয় দেখিয়ে বিজেপিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অত্যাচার করেছে ‘হিম্যান’ সাংসদ। গুন্ডামি করে, ভয় দেখিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ওদের মনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লেখা রয়েছে। বিজেপি সেটা মুছবে কীভাবে।’ উল্লেখ্য, এই মূহূর্তে ভাটপাড়া পুরসভার কাউন্সিলর সংখ্যা ৩৫। ১২ জন তৃণমূলে ফিরে এলে পুরসভা দখল করার জায়গায় চলে আসবে তৃণমূল। এদিনই কাউগাছি ও পানপুর পঞ্চায়েতের একাধিক সদস্য তৃণমূলে ফিরলেন।
প্রসঙ্গত, ভাটপাড়া পুরসভার দুই সিআইসিকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মঙ্গলবার। অপসারিত দুজন হলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত সিআইসি মনোজ গুহ ও জঞ্জাল অপসারন দপ্তরের সিআইসি মদনমোহন ঘোষ। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোজ গুহর জায়গায় দুর্বা ভট্টাচার্য ও মদনমোহনের জায়গায় মোহন দাসকে ওই দুই দপ্তরের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে, পুরপ্রধান সৌরভ সিংয়ের বক্তব্য, দলীয় স্তরে আলোচনা করেই ওই দুজনকে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে নতুন দুজনকে ওই পদে আনা হয়েছে। যদিও অপসারিত দুই সিআইসির দাবি, তাঁরা নিজে থেকেই পদত্যাগ করেছেন। পুরসভার রিসিভিং সেকশনে পদত্যাগ পত্র জমাও দিয়েছেন।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে মনোজ গুহর দাবি, ‘আমি তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলাম। লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপি কাউন্সিলরদের ভয় রীতিমতো ভয় দেখিয়ে সমর্থন আদায়ে বাধ্য করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিজেপিতে গেলেও মনটা আমাদের তৃণমূলেই পড়েছিল। তৃণমূল দলের কাছে আমরা আবেদন করব যাতে আমাদের দলে গ্রহন করে।’ অপরদিকে অপসারিত আর এক সিআইসি মোহন দাসের বক্তব্য, ভাটপাড়া পুরসভায় ইদানিং একটা অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সেই বিভাগের কর্মীদের বেতন দেওয়া হচ্ছিল না। কর্মীরা বেতন না পাওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছিল। তাই তিনি এই বদনামের ভাগীদার হতে রাজি নন। তিনি আরও বলেন, ‘এই অবস্থায় বিজেপিতে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.