বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: নদিয়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের বলি গৃহবধূ। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হলেন তৃণমূলকর্মীর স্ত্রী। মৃতের নাম মর্জিনা বিবি (২৩)। এই ঘটনায় অক্ষত রয়েছেন মৃতের স্বামী তাহাজুল শেখ। পুলিশ অকুস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। এদিকে গুলি করেই ঘটনাস্থল থেকে উধাও আক্রমণকারী ফুলতাব শেখ। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে চাপড়া থানার পুলিশ। এদিকে খুনের ঘটনার জেরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নদিয়ার চাপড়া থানার হাতিশালা গ্রামে।
গোটা ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এলেও স্থানীয় নেতারা তা মানতে নারাজ। পালটা দাবি, ব্যক্তিগত কারণেই তাহাজুল শেখকে খুন করতে এসেছিল ফুলতাব। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফুলতাব যখন তাঁর বাড়িতে আসে, তখন ঘুমিয়েছিলেন তাহাজুল। ফুলতাব ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে আগ্নেয়াস্ত্র বের করতেই বিপদ আঁচ করতে পারেন মর্জিনা বিবি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফুলতাবকে বাধা দিতে এগিয়ে যান। ফুলতাবও ট্রিগার চেপে দেয়। ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই গৃহবধূ। বেগতিক বুঝে এলাকা ছেড়ে পালায় ফুলতাব।
এই প্রসঙ্গে চাপড়া ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি জেবের শেখ বলেন, ‘এই খুনোখুনির সঙ্গে কোনও রাজনৈতির যোগ নেই। মৃত ওই মহিলা আমাদের দলীয়কর্মীর স্ত্রী। আমি নিজেই গিয়েছিলাম মৃতের বাড়িতে। মাঠে জল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ওই মহিলার স্বামী তাহাজুল শেখোর সঙ্গে ফুলতাব শেখের মধ্যে বুধবার গন্ডগোল হয়। ফুলতাব শেখ তাহাজুল শেখকে খুনের হুমকিও দেয়। এই ঘটনায় তাহাজুলের স্ত্রীর মৃত্যু দুঃখজনক। তবে ফুলতাব দলীয়কর্মী নয়। তাই গোষ্ঠী কোন্দলের প্রসঙ্গই উঠছে না। ‘জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেছেন, ‘মাঠের একটা গন্ডগোলের কারণে এক মহিলা খুন হয়েছেন। এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক যোগসূত্র এখনও পর্যন্ত নেই। পুলিশ তদন্ত করছে। রাত পর্যন্ত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
জানা গিয়েছে, ওই গ্রামের বাগান পাড়া এলাকার বাসিন্দা তাহাজুল শেখ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই গ্রামে পঞ্চায়েতের গ্রামসভার মিটিং ছিল। সেই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন তাহাজুল শেখ। অভিযোগ, মিটিং শেষের কিছু সময় পরেই তাহাজুলের বাড়িতে চড়াও হয় ফুলতাব শেখ-সহ বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে গুলি লাগে মর্জিনা বিবির বুকে। পরে রক্তাক্ত গৃহবধূকে তড়িঘড়ি চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি জমির ধান কাটা নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তাহাজুলের ঝামেলা হয়। সেই কারণেই এই খুন কি না অন্য কোনও কারণ আছে, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক গোলযোগের প্রসঙ্গটিও উঠছে। চাপড়া এলাকায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী রয়েছে। একটি গোষ্ঠীর মাথা কওসর শেখ অন্যটির মান্নান শেখ। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই বিবাদ দীর্ঘদিনের। এবছর হাতিশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছেন কওসরের লোক। এর জেরেই মান্নানের লোক ফুলতাব কওসর অনুগামী তাহাজুলকে খুন করতে যায়। কানাঘুষো এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। পুলিশ অবশ্য মুখে বলছে, মাঠে জল দেওয়াকে নিয়ে যত গন্ডগোল। আর তার জেরেই রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.