সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: পঞ্চায়েত ভোটের আগে জনসংযোগই প্রধান লক্ষ্য তৃণমূলের। স্থানীয়দের অভাব অভিযোগ শুনতে গ্রামে গ্রামে ‘দিদির দূত’। বুধবার গ্রামে গ্রামে ঘুরলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জুন মালিয়া, মহুয়া মৈত্র, শতাব্দী রায়ের মতো তৃণমূল নেতানেত্রীরা। প্রত্যেকে শুনলেন গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা। দিলেন সমাধানের আশ্বাসও।
দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে বিলকান্দা ১ পঞ্চায়েতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। স্থানীয় কালীমন্দিরে পুজো দেওয়ার পর মন্ত্রী বলেন, “গণতান্ত্রিক দেশে মানুষের প্রত্যাশার উপর কোন সীমারেখা টেনে দেওয়া হয় না। তাই তারা কোথাও কোথাও ক্ষোভ জানাচ্ছেন, বিক্ষোভ হচ্ছে। এতে কোন ভুল নেই। কয়েকজন হয়ত রাজ্য সরকারের প্রকল্পের সুবিধা পায়নি। কিন্তু কিছু জায়গায় এটাকেই খুব কুৎসিত করে দেখানো হচ্ছে। এত নিম্নমানের প্রচার আমি কখনও দেখিনি।” এদিন বিকেলে সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ফের বলেন, “অনেকে বলছেন আমাদের দলের কেউ কেউ বাড়ি তৈরি করে দেবে বলে টাকা নিয়েছে। আবার কারোর বাড়িতে অনেক টাকা পাওয়া গিয়েছে। এটা অন্যায়। কিন্তু বিরোধীরা যদি বলতে পারে তাদের দলে একজনও খারাপ লোক নেই তাহলে তাদের পার্টি অফিসে আমি ঝাড়ুদারের কাজ করব।”
এদিনই দত্তপুকুর ২ পঞ্চায়েতের জয়পুল এলাকায় একই কর্মসূচিতে যান দমদমের সাংসদ সৌগত রায়। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক রফিকুর রহমান। সাংসদের কাছে গ্রামবাসীরা আবাস যোজনায় ঘর পাওয়ার নিয়ে অভিযোগ করার পাশাপাশি স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ইজরাইল বলেন, “বিগত বহু বছর এলাকায় কোন কাজ হয়নি। নিকাশি, রাস্তা নির্মান সহ ১০০ দিনের কাজের টাকা আত্মসাৎ করেছেন ওই তৃণমূল নেতা।”
দমদমের সাংসদ বলেন, “কাজ নিয়ে মানুষের অভিযোগ থাকতেই পারে। তবে আবাস যোজনার ঘর সব অযোগ্য লোকেরাই পেয়েছেন, এটা ঠিক নয়। মুখে মুখে অভিযোগ নয়, অযোগ্যদের তালিকা তৈরি করে প্রধান, বিধায়ককে দিতে বলা হয়েছে।”
বুধবার সিউড়ি দুই নম্বর ব্লকের বনশঙ্কা অঞ্চলে ‘দিদির দূত’ হিসাবে যান শতাব্দী রায়। বিড়ালতোড় গ্রামে সজল সাহার বাড়িতে কর্মীদের সঙ্গে পাত পেড়ে একসঙ্গে খেলেনও তিনি। মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, পোস্ত, মিক্সড ভেজ, মাছ। লাল জবার বিশাল মালা দিয়ে ডোমাইপুরের কালীমন্দিরে পুজো দেন শতাব্দী। পরে শিকারপুরের স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে গল্পে মাতেন। তিনবারের সাংসদ বলেন, “আমি যখন প্রথম এলাম সবাই বলল ও তো ভোটে জিতেই পালাবে। গত ১৪ বছরে বীরভূমের মানুষ জেনেছে, আমি পালিয়ে যাওয়ার লোক নই। কতবার এই সাঁইথিয়া বিধানসভার গ্রামে এসেছি।”
মাড়গ্রামে শতাব্দী রায়ের খেতে বসে উঠে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়। সে প্রসঙ্গে শতাব্দী জানান, সেদিন তিনি কর্মীর বাড়ির ভিতরে খাওয়াদাওয়া সারেন। তখন সমীক্ষক সংস্থা থেকে সাংবাদিকরা সকলেই খাচ্ছিলেন। তাঁরা সে ছবি পাননি। তাই তাঁদের অনুরোধে ছবি তোলার জন্য কর্মীদের সঙ্গে খেতে বসেছিলেন। ছবি তোলা হয়ে গেলে উঠে যান। আর সেই ছবিটি নিয়েই সমালোচনা চলছে। শতাব্দী রায় আরও বলেন, “তোমরা আমাকে কতটা জানো? তুমি কি আমার মাসি না মা? আমি কি খাই? গরিবের সঙ্গে খাই কিনা? তুমি বলার কে। একটা মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে বদনাম করা। তাতে শতাব্দী রায়কে ছোট করা যায় না।”
মেদিনীপুরের কর্ণগড়ে জনসংযোগ সারলেন ‘দিদির দূত’ জুন মালিয়া। মেঠো পথে স্কুটিতে চড়ে ঘুরলেন মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক। শুনলেন স্থানীয়দের অভাব অভিযোগ। ঘরের মেয়ের মতো দুপুরে মাটিতে বসে শালপাতায় খেলেন মধ্যাহ্নভোজ।
এদিকে, এদিন ‘দিদির দূত’ হিসাবে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ান সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটবাক্সে ‘দিদির দূত’ কর্মসূচির সুফল পাবে তৃণমূল। যদিও বিরোধীরা তা মানতে নারাজ। পরিবর্তে ‘দিদির দূত’দের ‘দিদির ভূত’ বলেও কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ আরও অনেকে। তবে পালটা তার জবাব দিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি নেতাদের ‘মোদির যমদূত’ বলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.