Advertisement
Advertisement
TMC

হাতে চুড়ি পরিয়ে দেব! পুলিশকে হুমকি বর্ধমানের তৃণমূল নেতার

তৃণমূলের ফ্লেক্স পোড়ানোর ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে।

TMC leader warns police at Katwa

পুলিশকে হুমকি তৃণমূল নেতার।। ছবি: জয়ন্ত দাস।

Published by: Paramita Paul
  • Posted:December 24, 2024 7:49 pm
  • Updated:December 24, 2024 7:49 pm  

ধীমান রায়, কাটোয়া: তৃণমূলের ফ্লেক্স পোড়ানোর ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে। ক্ষিপ্ত তৃণমূল কর্মীরা কৈচর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্যসড়ক অবরোধ করেন। দাবি, দলীয় ফ্লেক্স পোড়ানোর ঘটনায় যারা জড়িত তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। প্রকাশ্যেই পুলিশের উদ্দেশে হুমকি দেন তৃণমূল নেতা। ক্ষীরগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি মাসুদূর রহমান ওরফে মুকুলকে উপস্থিত পুলিশকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, “দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। একটা পর্যন্ত সময় থাকল। না হলে আপনাদেরকেও হাতে চুড়ি পরিয়ে দেব।” এই ঘটনা ঘিরে এলাকায় রাজনৈতিক মহলেও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে বিগত কয়েকমাস ধরেই শাসকদলের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত চলে আসছে। বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর বিপক্ষ গোষ্ঠীর এই সংঘাত ঘিরে মাঝেমধ্যেই অশান্তি বা সংঘর্ষের ঘটনাও সাম্প্রতিককালে ঘটেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের উত্তেজনার সূত্রপাত মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম অঞ্চলের কুড়ুম্বা গ্রামে বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর ফ্লেক্স, ব্যানার ইত্যাদি ছিঁড়ে দেওয়া ও পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

Advertisement

উল্লেখ্য, মঙ্গলকোটের পালিশগ্রামে বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহারের। রাজনৈতিক মহলের খবর, বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর বিপক্ষ গোষ্ঠীর অনেকেই এখন শ্যামাপ্রসন্নের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। ওই পালিশগ্রামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে আগামী ১ জানুয়ারি বড়সড় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। শ্যামাপ্রসন্ন লোহারের সঙ্গে ওই সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আগে থেকেই ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে পালিশগ্রামের ওই সংস্থার কর্মসূচি ঘিরে কয়েকদিন আগে থেকেই মঙ্গলকোট বিধানসভা এলাকায় প্রচার করা হচ্ছে। বিভিন্ন অঞ্চলে এবং গ্রামে গ্রামে ফ্লেক্স, ব্যানার টাঙানো হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুদিন আগে ক্ষীরগ্রাম অঞ্চলের কুড়ুম্বা গ্রাম-সহ একাধিক গ্রামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রক্তদান শিবিরের ব্যানার টাঙানো হয়। উল্লেখ্য, ওই ব্যানারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও ছাপা হয়েছিল উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে। অভিযোগ, ওই ব্যানার, ফেস্টুন টাঙাতে গিয়ে অপূর্ব চৌধুরীর গোষ্ঠীর লোকজনদের বাধার মুখে পড়তে হয়। শ্যামপ্রসন্ন লোহারের অনুগামীদের অভিযোগ অপূর্ব চৌধুরীর লোকজন পালিশগ্রামের রক্তদান শিবিরের কর্মসূচির প্রচারের ব্যানারগুলি ছিঁড়ে ফেলে দেয়। এনিয়ে আগে থেকেই চাপা উত্তেজনা ছিল।

জানা গিয়েছে, দলীয় কর্মসূচি মেনেই মঙ্গলকোট ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কৈচরে দলীয় কার্যালয়ে দলের প্রতিষ্ঠাদিবস পালনের পাশাপাশি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। এই কর্মসূচি ঘিরে কুড়ুম্বা গ্রামে তৃণমূলের কিছু ফ্লেক্স, ব্যানার টাঙানো হয়। অভিযোগ, সোমবার রাতে তৃণমূলের ওই ব্যানার কেউ বা কারা পুড়িয়ে দেয়। এদিন মঙ্গলবার সকালে তা জানাজানির পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। ক্ষীরগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি মাসদূর রহমান ওরফে মুকুলের নেতৃত্বে কুড়ুম্বা গ্রামে তানিয়ে প্রতিবাদ মিছিল হয়। পাশাপাশি মুকুলকে দেখা যায় সন্দেহজনক ব্যক্তির বাড়ির সামনে গিয়ে ওই পরিবারের মহিলাদের জিজ্ঞাসা করছেন,”মা আপনারা তো লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পান, তাহলে বলুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি পুড়িয়ে দেওয়া কি ঠিক হয়েছে? যদিও তৃণমূল কর্মীরা ওই পরিবারের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি।” ওই পরিবারের মহিলারাও তাঁদের ব্যানার পোড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন। এইভাবে চলার পর বেশকিছু তৃণমূল কর্মী সমর্থক কৈচর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এসে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীও পুলিশের কাছে দাবি করেন অবিলম্বে দলীয় ব্যানার পোড়ানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বিক্ষোভের পাশাপাশি তৃণমূল কর্মীরা বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্যসড়ক অবরোধ শুরু করেন। আটকে যায় বেশকিছু গাড়ি। শুধুমাত্র অ্যাম্বুল্যান্সগুলি ছাড়া হয়। আর পুলিশ অবরোধ তোলার চেষ্টা করতেই দেখা যায় তৃণমূল নেতা মাসদূর রহমান রীতিমতো পুলিশকে হুমকির সুরে বলছেন,”একটা পর্যন্ত সময় দিলাম। তা না হলে আপনাদের হাতেও চুড়ি পরিয়ে দেব।” যদিও কিছুক্ষণ অবরোধ চলার পর বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী এসে দলীয় কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে যান। অপূর্ব চৌধুরী বলেন,”আমরা সবসময়ই নেত্রীর আদর্শ মেনে উন্নয়ন এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার পক্ষে। যারা এলাকা অশান্ত করতে চাইছে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।” অন্যদিকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন,”রাজনৈতিক অরাজনৈতিক সব সংগঠনেরই ব্যানার, ফেস্টুন টাঙানোর অধিকার আছে। যারা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছে বা পুড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।”

উল্লেখ্য শুধুমাত্র কুড়ুম্বা গ্রামেই নয়, সোমবার সন্ধ্যায় মঙ্গলকোটের লাখুড়িয়া অঞ্চলের কল্যানপুর গ্রামে পালিশগ্রামের কর্মসূচির ব্যানার টাঙাতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। দুই মহিলা সহ ৬ জনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিধায়ক অনুগামীদের বিরুদ্ধে। এনিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement