সৈকত মাইতি ও বিপ্লবচন্দ্র দত্ত: চলতি বছরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে জনসংযোগে বিশেষ জোর তৃণমূলের। আর সেকথা মাথায় রেখে রাজ্যের শাসকদলের নয়া কর্মসূচি ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’। এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যার কথা জানতে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন ‘দিদির দূত’রা। বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরে পাঁশকুড়া গোবিন্দনগরে যান তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কৃষ্ণনগরের দক্ষিণ ভাণ্ডারখোলায় ‘দিদির দূত’ মহুয়া মৈত্র।
বুধবার পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর অঞ্চলের মহাপুর, বিজাহারপুর, রাজনগর স্কুল, গোবিন্দ নগরে যান তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। রাজ্য সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন এবং বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগসুবিধা নিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। বাম আমল থেকেই দীর্ঘদিন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার অবস্থা বেহাল। স্থানীয় পঞ্চায়েত স্তর থেকে শুরু করে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিভাবক জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে ‘দিদির দূত’ কুণাল ঘোষকে কাছে পেয়ে নিত্যদিনের জীবন যন্ত্রণার কথা উগরে দিলেন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের তৎক্ষণাৎ আশ্বস্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান কুণাল।
সকাল প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ প্রথমে তিনি মহাপুর গঙ্গা মন্দিরে পুজো দিয়ে জনসংযোগ কর্মসূচির সূচনা করেন।
এরপর এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী ডক্টর অমর আলির সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানান। সেই সময় ওমর আলির পুত্র শেখ মুসলেম আলি তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।
বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি রাজনগর হাইস্কুলে সারপ্রাইজ ভিজিটে যান। স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন। মিড ডে মিল, কন্যাশ্রী-সহ স্কুলের সামগ্রিক পঠনপাঠন নিয়ে বিস্তর খোঁজখবর নেন।
এরপর একে একে এলাকা পরিদর্শন করে তিনি ধনঞ্জয়পুর এলাকাতে যান। দীর্ঘদিনের বেহাল রাস্তার কথা স্থানীয় মহিলারা কুণালকে বলেন। তাঁদের অভিযোগ, প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে পাঁশকুড়া ব্লকের ধনঞ্জয়পুরের গোবিন্দ নগর থেকে গোলঘাট পর্যন্ত গ্রামীণ রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। খানাখন্দে ভরা এই রাস্তায় পথ চলতে গিয়ে প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। অবিলম্বে বেহাল রাস্তার সংস্কার না হলে ভোট বয়কটেরও হুঁশিয়ারি দেন গ্রামবাসীরা। অভাব অভিযোগ শোনার পর দলীয় কিষাণ ক্ষেতমজুরের সভাপতি সুধাংশু আদককে এলাকার অনুন্নয়নের বিষয় নিয়ে তীব্র ভর্ৎসনা করেন। গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করে বলেন, “দ্রুত এই রাস্তা সংস্কার হবে। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমি কথা বলছি।”
গ্রামবাসীদের ক্ষোভ বিক্ষোভ সামলে দুপুরে দলীয় এক কর্মীর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারেন কুণাল। সেখান থেকে বেরিয়ে বিকেলে গোবিন্দনগর অঞ্চলে স্থানীয় নেতৃত্বদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে পাঁশকুড়ার রাতুলিয়া বাজারে জনসভায় যোগদান করেন। এরপর একে একে রাতুলিয়া বাজার সংলগ্ন একটি সমবায় সমিতিতে কর্মীসভা-সহ একাধিক কর্মসূচিতে যোগদান করেন কুণাল ঘোষ। দিনভর জনসংযোগ শেষে রাতে কুণাল ঘোষ স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন।
কৃষ্ণনগর দক্ষিণের ভাণ্ডারখোলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে অংশ নেন মহুয়া মৈত্র। বুধবার ওই এলাকার প্রতিটি বাড়িতে ‘দিদির দূত’ হিসাবে পৌঁছন তৃণমূল সাংসদ। শোনেন তাঁদের অভাব অভিযোগ। রাস্তা, পানীয় জল-সহ বেশ কিছু সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। গ্রামের একটি স্কুলেও যান তিনি। শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।
যাঁরা আবাস যোজনার সুবিধা পাননি, তাঁরাও দুরাবস্থার কথা সাংসদকে জানান। মহুয়া মৈত্র বলেন, “এটা ২০১৬ সালের সার্ভে। ২০২২ সালে সার্ভে করতে গেলে দেখা যেতে পারে অনেকেই সরকারি ঘরের অপেক্ষায় না থেকে মাথা গোঁজার আশ্রয় পাকা করে নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর নাম বাদ যাবে। মোদ্দা কথা, যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে তাঁরা আবাস যোজনার সুবিধা পাবেন না। যাঁদের কাঁচা বাড়ি রয়েছে সে যেই হোন না কেন বাড়ি পাবেন।” সারাদিন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথাবার্তার পর বিকেলে একটি পথসভাও করেন মহুয়া। ওই পঞ্চায়েত এলাকায় তার রাত্রিবাস করার কথা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.