অর্ণব দাস, বারাকপুর: দাদার খুনের বদলা নিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভাটপাড়ার (Bhatpara) তৃণমূল নেতা অশোক সাউকে হত্যার ঘটনায় এখন শিরোনামে সমাজবিরোধী সুজল সাউ। সেই দলবল নিয়ে পরিকল্পনামাফিক অশোককে খুন করে বলে অভিযোগ। যে চায়ের দোকানে অশোক গিয়েছিলেন, বুধবার সকালে সেখানে প্রথমে গুলি, তার পর বোমা ছোড়া হয়। সেই বোমা না ফাটায় ফের গুলি, পালানোর সময় আবারও বোমাবাজি। ধারাবাহিকভাবে হিংসা ছড়িয়ে পগারপার হয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীদল। হত্যাকাণ্ডের কয়েক মুহূর্তের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিলেন অকুস্থলে উপস্থিত যোগেন্দ্র পাসোয়ান। জানালেন, ৫ মিনিটেই অপারেশন শেষ করে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
ভাটপাড়া পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পালঘাটের একটি চায়ের দোকান বুধবার তৃণমূলের প্রাক্তন ওয়ার্ড সভাপতি অশোক সাউকে খুনের সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা যোগেন্দ্র পাসোয়ান। এদিন তাঁর মুখ থেকে শোনা গেল হত্যাকাণ্ডের হাড়হিম বর্ণনা। যোগেন্দ্রর কথায়, “আমি আর অশোক কেক কিনে খাবো, এমন সময় হামলা চালানো হয়। চায়ের দোকানের বাইরেও অনেকে ছিল। কেউ মাস্ক পরে ছিল না। একজনের হাতে দুটো বোমা আর বাকিদের হাতে বন্দুক ছিল। ৫ মিনিটে ওঁরা গোটা অপারেশন শেষ করে পালায়।”
চার বছর পর দাদার খুনের বদলার এই ঘটনায় আবার বছর খানেক আগে তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদব খুনে অন্যতম অভিযুক্ত পঙ্কজ ওরফে ইমরানের যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছেন জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। এই পঙ্কজকে আবার বিভিন্ন সময়ে প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করেছিলেন বলেও অভিযোগ তাঁর। তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “অর্জুন সিং সদ্য তৃণমূলে এসে হাওড়ার এক প্রোমোটার, পরে ভাটপাড়ায় মুকুলকে খুন করিয়েছিল এই পঙ্কজকে দিয়ে। তার পর থেকেই পঙ্কজ ছিল অর্জুনের আশ্রয়ে। এই পঙ্কজ তৃণমূল কর্মী ভিকিকে খুন করিয়েছিল। পঙ্কজ আবার আকাশ সাউয়ের খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। সেই সূত্রেই আকাশ খুন হওয়ার পর তার ভাই সুজলকে পঙ্কজ জেলে এবং পরে বারাকপুর আদালতে দেখা করে প্রতিশোধ নিতে উস্কে দেয়। তারাই এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। অশোক সাউ খুনে পঙ্কজই গুলি-বোমা জোগান দিয়ে সহযোগিতা করছে। আমার উপরও হামলা হওয়ার আশঙ্কা করছি।”
যদিও অশোক সাউ খুনের ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী করেছেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিং। তাঁর বক্তব্য, “মৃতের পরিবার প্রকাশ্যে বলেছে, যারা খুন করেছে তারা তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যাম ঘনিষ্ঠ। এরাই প্রিয়াঙ্কু পাণ্ডের উপর হামলা চালিয়েছিল। যাকে খুন করেছে, সেও তৃণমূল নেতা। তাই আমার মনে হয়, মৃতের পরিবারের এনআইএ তদন্ত চেয়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত জানানো উচিত। কারণ এই ঘটনায় বিস্ফোরক ব্যবহার হয়েছে। পরিবারের পাশে আমরা আছি, চাইলে সবরকম আইনি সহযোগিতা করব।”
অন্যদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার রাতে কাউসার আলি ওরফে মোহনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর খুনে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ধৃতকে বারাকপুর আদালতে পেশ করা হলে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। তদন্তের জন্য বারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (নর্থ) গণেশ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিট গঠন হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, “গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে। দ্রুত এর কিনারা করা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.