বাবুল হক, মালদহ: ফল, মিষ্টি-সহ খাবারের প্যাকেট বাড়িতে। তবে যারা বয়ে নিয়ে এল, তাদের দেখে ভয়ে শিউড়ে উঠলেন প্রাপক। প্যাকেটের ওপরে লেখা ‘মৃত্যুর প্যাকেট’। সঙ্গে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া উড়ো চিঠি। ঘটনা মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের। যাঁকে বাড়তি সৌজন্য দেখিয়ে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে, তিনি এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য আমিনুল হক। উড়ো চিঠিতে তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগমকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য আমিনুল হক। তাঁর বাড়িতে একটি বাক্স নিয়ে পৌঁছয় জনাকয়েক দুষ্কৃতী। আমিনুল হকের কথায়, ‘শুক্রবার রাতে বাড়িতে একাই ছিলেন আমার স্ত্রী মমতাজ বেগম। আমি মালদহ শহরে গিয়েছিলাম মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সভায় যোগ দিতে। সেসময় পাঁচজন সশস্ত্র দুষ্কৃতী আমার বাড়িতে একটি বাক্স নিয়ে ঢুকে পড়ে। আমার স্ত্রীকে বন্দুক দেখিয়ে, একটি খোলা চিঠি সামনে রেখে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। তারপর স্ত্রীর সামনে খাবারের একটি প্যাকেট ফেলে, সেই খাবার খেতে বলে দুষ্কৃতীরা। এসব ঘটার সময় বাড়ির এক পরিচারক মোবাইলে ছবি তুলে রাখে। তাই দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে।` স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে খবর, এলাকার প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত আমিনুল হক। সম্প্রতি এলাকায় তোলাবাজি সহ একাধিক জনবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করেছিলেন, দলের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে। আর তাতেই দলের একাংশের কোপে তাঁকে পড়তে হয়। বাড়িতে দুষ্কৃতী হামলা এবং খুনের উড়ো চিঠির পেছনে এটাই কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। মমতাজ বেগম জানান, ‘অশ্লীল ভাষায় মৃত্যুর চিঠি লিখে বাড়িতে হুমকি দিয়ে গিয়েছে ওরা। আতঙ্কে রয়েছি। রাজ্য নেতৃত্বকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।` গোটা ঘটনায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় দুষ্কৃতীদের ছবি-সহ অভিযোগ দায়ের করেছেন হক পরিবার। ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা। আমিনুল অনুগামীদের দাবি, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। চাঁচলের এসডিপিও সজলকান্তি বিশ্বাস যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
[গৃহকর্তার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে দুঃসাহসিক ডাকাতি, আতঙ্ক চন্দ্রকোনায়]
ঘটনা নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যে দলের নেতানেত্রীদের খুনের হুমকি দেবে, আর সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে, তা কখনওই বরদাস্ত করব না। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি।` তোলাবাজি-সহ একাধিক সমাজবিরোধী কাজ নিয়ে বারবারই দলকে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশ মেনেই এলাকায় কোনওরকম অন্যায় দেখলে, তা রুখে দিতে এগিয়ে যান আমিনুল হক। আর তা থেকে তৈরি হচ্ছে প্রাণভয়। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়ছে হরিশ্চন্দ্রপুরবাসীর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.