পলাশ পাত্র, তেহট্ট: প্রয়াত তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি চুনীলাল দত্ত। দ্বাদশীর ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নদিয়ার তেহট্টের বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে এই বর্ষীয়ান দলনেতার। বয়স হয়েছিল চুয়াত্তর বছর। লক্ষ্যণীয় বিষয়, বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া এই প্রবীণ নেতার মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার নদিয়া জেলাস্তরে যেন মুছে গিয়েছে রাজনৈতিক ভেদাভেদ। প্রিয় নেতাকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে এক উঠোনে হাজির বিজেপি, তৃণমূল
নেতারা। সন্ধেবেলা নবদ্বীপে চুনীলাল দত্তের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
বরাবর অটলবিহারী বাজপেয়ীর রাজনৈতিক মতাদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন চুনীলাল দত্ত। ছিলেন তাঁর অত্যন্ত স্নেহভাজন এবং ভরসাযোগ্য ব্যক্তি। নয়ের দশকে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে লোকসভা ভোটে লড়েছেন। পরবর্তী সময়ে বিধানসভা ভোটেও প্রার্থী হয়েছিলেন। এছাড়া সংগঠনের সঙ্গে সবসময়েই ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত ছিলেন চুনীলাল দত্ত। ১৯৯৯ সালে বাজপেয়ী কৃষ্ণনগরে যান বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে।
কৃষ্ণনগর সার্কিট হাউসে ছিলেন তিনি। সেসময় এই চুনীলাল দত্তই ছিলেন তাঁকে দেখভালের দায়িত্বে। সার্কিট হাউসে কারা দেখা করবেন, কারা প্রবেশাধিকার করবেন না, তারও দায়িত্ব ছিল এই নেতার উপরেই। পরবর্তী সময়ে তিনি জেলা সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন। একসময়ে বিজেপির দাপুটে নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রচারকাজেও নিযুক্ত ছিলেন চুনীলাল দত্ত।
২০০০ সালের পর, বাজপেয়ী অসুস্থ হওয়ার পর থেকে বিজেপির প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহ হারাতে থাকেন চুনীলাল দত্ত। সেসময়ই জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চমকপ্রদ উত্থান নজর কেড়েছিল অনেকের। আর তাতে আকর্ষিত হয়ে চুনীলাল দত্ত তৃণমূলে যোগ দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রাজ্যের সহ-সভাপতির পদ দেন। বয়স বাড়লেও, একেবারেই শক্ত-সমর্থ ছিলেন তিনি। এমনকী চলতি বছরের লোকসভা ভোটেও কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রর সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রীর রোড শো’য় পা মিলিয়েছিলেন সত্তরোর্ধ্ব এই নেতা।
সুস্থই ছিলেন অকৃতদার মানুষটি। ষষ্ঠীর দিন ভাইপো এসে কৃষ্ণনগরের বাড়ি থেকে তাঁকে নিয়ে যান তেহট্টের দত্তপাড়ায়, আদি বাড়িতে। কিন্তু দ্বাদশীর ভোরেই তাঁকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন আত্মীয়রা। মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় তেহট্টে। সেখানে তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন স্থানীয় বিধায়ক কল্লোল খাঁ, গৌরীশংকর দত্ত, তাপস সাহা। মাল্যদান করা হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও দলের তরফে তাঁর
পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, পূর্বতন দলের তরফে বেশ কয়েকজন নেতাও যান তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে। রাজ্য বিজেপির ওবিসি সেলের সহ-সভাপতি গদাধর ঘোষ, বিজেপি নেতা হরিদাস প্রামাণিকরা সকলে চুনীলাল দত্তর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে মাল্যদান করেন। আর এখানেই বোঝা গেল, বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক কতটা জনপ্রিয়। যাঁর প্রয়াণে ভেঙে যায় রাজনৈতিক ভেদাভেদ। একসঙ্গে শোকজ্ঞাপন করেন দলমত নির্বিশেষে নেতানেত্রীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.