শেখর চন্দ্র, আসানসোল: ধোপে টিকল না অসুস্থতার যুক্তি। আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে আবারও খারিজ অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের আবেদন। এবার জেল হেফাজতে অনুব্রত মণ্ডল। আপাতত ১৪ দিন আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারেই থাকতে হবে তাঁকে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে তোলা হবে দাপুটে তৃণমূল নেতাকে।
চারদিনের সিবিআই হেফাজত শেষে বুধবার ফের আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলা হয় অনুব্রত মণ্ডলকে। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আরও একবার যেকোনও শর্তে তাঁর জামিনের আবেদন জানান আইনজীবী। বিচারককে তিনি বলেন, “অনুব্রত মণ্ডল শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাঁকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানোর সুযোগ দেওয়া হোক। অনুব্রতর যেকোনও মুহূর্তে অক্সিজেন প্রয়োজন হতে পারে। জামিন পাওয়ার পর প্রয়োজনে তিনি বীরভূমে যাবেন না। নিজাম প্যালেসের আশেপাশে কোনও বাড়িতে থাকবেন।” বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী বলে ওঠেন, “আবার বাড়ি?” এজলাসে ওঠে হাসির রোল। এরপর বিচারক তৃণমূল নেতাকে ইনহেলার দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এরপর বিচারকের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি চান অনুব্রত। হাতজোড় করে তিনি বলেন, “হুমকি চিঠি কে দিল, তার সিবিআই তদন্ত হোক।” বিচারক বলেন, “এই মামলার সঙ্গে হুমকির কোনও সম্পর্ক নেই। তাই কেউ এ বিষয়ে কথা বলবেন না।” তবে প্রভাবশালী তত্ত্বে আরও একবার সিবিআইয়ের আইনজীবী অনুব্রতর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন। তাঁর ১৪ দিনের জেল হেফাজতের আবেদন জানায় সিবিআই। জেলে গিয়ে জেরা করার অনুমতি চায় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী বলেন, “গরু পাচার মামলার তদন্তে অনেকের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। অনুব্রতর নাম বারবার উঠে এসেছে। তাঁকে ছেড়ে দিলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে।” অনুব্রতর আইনজীবী প্রভাবশালী তত্ত্ব খারিজ করে দেন। বিচারককে তিনি বলেন, “সবাইকে প্রভাবশালী বলার চেষ্টা করে সিবিআই। তাঁকে সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।”
অনুব্রতর আইনজীবীর যুক্তি, “আমার মক্কেল গরু পাচারে কোনওভাবে জড়িত নন। পশুহাট থেকে গরু কিনে সীমান্তে গরু পাচার করা হলে আমার মক্কেলের কী দোষ? সীমান্তে গরুপাচার হলে তার দায় বিএসএফের। দায়িত্ব এড়াতে পারে না বিএসএফ। এখনও পর্যন্ত শুধু একজন বিএসএফ কম্যান্ডান্ট গ্রেপ্তার হয়েছে। আর কেউ নয়। আমার মক্কেল সেফ প্যাসেজ করে দিতেন তার কোনও প্রমাণ নেই। আমার মক্কেলকে টার্গেট করা হচ্ছে। এটা একটা টার্গেটেড ইনভেস্টিগেশন। শুধু সন্দেহের বশে হেফাজতে চেয়েছে সিবিআই।”
অনুব্রতর আইনজীবী আরও বলেন, “উনি ওয়েল নোন পার্সন। মুখ্যমন্ত্রীও চেনেন। এটাই কি আমার মক্কেলের দোষ? আমার মক্কেলের নাম এফআইআরে নেই। নাম রয়েছে এনামুল হক ও সায়গল হোসেনের। সায়গল তাঁর দেহরক্ষী। সায়গলের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি পাওয়া গিয়েছে। তাঁর নামে কোনও বেনামি সম্পত্তি পেলে আয়কর দপ্তরকে পেনাল্টি দিয়ে দেবেন।” পালটা সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, “অনুব্রতর নামে আমরা প্রচুর সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছি। শুধু নিজের নয়, আত্মীয়ের নামে সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। তদন্তে এতটুকু সাহায্য করছেন না অনুব্রত। উনি প্রভাবশালী। এটা কোনও টার্গেটেড ইনভেস্টিগেশন নয়। একটাও প্রমাণ দিতে পারবেন যে এটা রাজনৈতিকভাবে করা হচ্ছে? গরু পাচার কোনও ছোটখাট অপরাধ নয়। এনামুল এই চক্রের মাথা। তার থেকে অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল টাকা নিত। সেই টাকা অনুব্রতর কাছে যেত। এটা একটা চেন বিজনেস। অনেক ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে।” ঘণ্টাখানেক ধরে চলে সওয়াল জবাব। কিছুক্ষণ রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারক। পরে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.