কৃষ্ণকুমার দাস: নন্দীগ্রামে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) কর্মসূচিতে জনবিস্ফোরণ। রাত সওয়া ন’টা নাগাদ নন্দীগ্রামের তেঙ্গুয়া মোড়ে লক্ষাধিক মানুষ। সেখানে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তুলোধোনা করলেন বিরোধী দলনেতাকে। বক্তব্যের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারীকে টার্গেট করে অভিষেক বললেন, “ক্ষমতা থাকলে এখনই ভোট হোক। আদালত রায় দিলে এখনই যদি ভোট হয় তবে ৫০ হাজারে জিতবে তৃণমূল কংগ্রেস।” শুভেন্দুকে গদ্দার, মীরজাফর, বেইমান, তোলাবাজ, ঘুষখোর বলে পরপর তোপ দেগে অভিষেকের কটাক্ষ, লোডশেডিংয়ে জিতে বিধায়ক হয়েছেন শুভেন্দু। কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে অভিষেকের হুঁশিয়ারি, “সিবিআই ইডি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। আপনারা মেরুদণ্ড শক্ত করে লড়াই করুন। ও আর ঘর থেকে বেরোতে পারবে না। আর ও এখানে এসে ভয় দেখালে ঘিরে রেখে আমায় খবর দেবেন। কলকাতা থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে চলে আসব। আপনাদের পাশে থাকব। আমি এক কথার ছেলে। আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আপনাদের পাশে থাকব।” অভিষেকের সাফ কথা, “এ মাটি গদ্দারের মাটি নয়, বেইমানের মাটি নয়। নন্দীগ্রামের মাটি লড়াইয়ের মাটি।” একইসঙ্গে বলেন, “শুধু নন্দীগ্রাম নয়, বিজেপি-দূষণ মুক্ত হবে দেশ। মিজোরাম, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড়– ৫ রাজে্যর ভোটে বিজেপি গোহারা হবে। এই দেশ থেকে বিদায় নেবে বিজেপি। ২৪-এই বিদায় নেবে বিজেপি। আমরা ২১-এ বাংলায় খুঁটি পুজো করেছিলাম। ২৪-এ দিল্লিতে বিসর্জন হয়ে যাবে।”
বৃহস্পতিবার সকালেও এ নিয়ে টুইট করেন অভিষেক। বিকেল ৩টে ৩২-এ চণ্ডীপুর ফুটবল গ্রাউন্ডের পাশে ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তিতে মালা দিয়ে লক্ষাধিক মানুষ সঙ্গে নিয়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা শুরু করেছিলেন অভিষেক। রেকর্ড করে দেয় এই পদযাত্রা। রাত বাড়তেই জনবিস্ফোরণের চেহারা নেয় পদযাত্রা। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চের ঘটনায় লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে অভিষেক বলেন, “এই নন্দীগ্রামেই সিপিএম হার্মাদরা মা-বোনেদের সম্ভ্রম লুঠ করেছিল। নিখোঁজ হয়েছিল হার্মাদদের তাণ্ডবে।” এর পরই সরাসরি বিজেপি তথা বিরোধী দলনেতাকে কড়া আক্রমণ শানান প্রতি ছত্রে। অভিষেক বলেন, “এই ভিড় দেখে আমার বিশ্বাস, আমি নিশ্চিত যে, আগামিদিনে বাংলার রাজনীতি দূষণমুক্ত হতে চলেছে। নন্দীগ্রামে শান্তির মাটি। এখানে গদ্দারদের জমানত জব্দ হতে চলেছে। যে সাহস নিয়ে মানুষ পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন, সেই সাহস দেখিয়ে লড়াই করুন। আপনাদের গায় হাত পড়লে আমি নিজে আসব। আপনারা যদি চান ওর বাড়ি ঘেরাও করুন।” এর পরই শুভেন্দুকে তাঁর চ্যালেঞ্জ, “এখানে তো লোডশেডিংয়ে জিতেছিল। ক্ষমতা থাকলে রাত ৯টায় তেঙ্গুয়া মোড়ে মিছিল করুক।” শুভেন্দুকে কড়া আক্রমণ করে অভিষেক বলে দেন, “বিজেপির মেয়াদ তো আর এক বছর। যে ইডি-সিবিআই দিয়ে গদ্দার ভয় দেখাচ্ছে, তাকেই সিবিআই গ্রেপ্তার করবে। তাকিয়ে দেখবেন যত দিন যাচ্ছে মুখ ফুলে যাচ্ছে। চোখে ভয়ের বাসা। পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরে বেইমানি। মুখে হতাশা।”
শুভেন্দুকে পরপর বেঁধেন অভিষেক। কেন্দ্রের ক্রীতদাস বলে কটাক্ষ ছুঁড়ে বলেন, “এই দিল্লির ক্রীতদাসকে ভয় পাবেন না।” স্লোগান তুলে বলেন, গদ্দার হঠাও নন্দীগ্রাম বাঁচাও, বেইমান হঠাও নন্দীগ্রাম বাঁচাও, মীরজাফর হঠাও নন্দীগ্রাম বাঁচাও, শুভেন্দু হঠাও নন্দীগ্রাম বাঁচাও, তোলাবাজ হঠাও নন্দীগ্রাম বাঁচাও, ঘুষখোর হঠাও নন্দীগ্রাম বাঁচাও। বলেন, “ধর্মের দূষণ করে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে এলাকা দখল করতে চাইছে। বিজেপির সব আবর্জনাকে আমরা নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে সাফাই করব। গদ্দারদের দেখলে ঘিরে রাখুন। আমায় খবর দেবেন। সিআরপিএফ দিয়ে অত্যাচার করলে ভয় পাবেন। ক’দিন আগে কনভয়ে চাপা দিয়ে লোককে মেরে দিল।” জনতার কাছে অভিষেকের আবেদন, শুধু পঞ্চায়েত নয়, লোকসভাতেও গদ্দারদের তাড়াতে হবে। তাঁর কথায়, “আদিম হিংস্র মানবিকতার আমি যদি কেউ হই, স্বজন হারানো শ্মশানে গদ্দারদের চিতা তুলবই।”
রাতে নন্দীগ্রামের সীতানন্দ কলেজ মাঠের পাশের পৌঁছে ৪২টি শহিদ পরিবারের সদস্যর সঙ্গে দেখা করেন। অভিষেক জানিয়েছেন, এতটা পথ বহু মানুষ তাঁকে জানিয়েছেন নন্দীগ্রামকে গদ্দারমুক্ত করুন। শেষে অধিবেশন থেকে শুভেন্দুকে আক্রমণ করে অভিষেকের চ্যালেঞ্জ, “আমি তো রাত সাড়ে ১০টায় সভা করে প্রমাণ করে দিলাম গদ্দারের সঙ্গে নন্দীগ্রামের কেউ নেই। এখানে হাজার হাজার মানুষ আছে। ওদের সঙ্গে ইডি-সিবিআই আছে। মোদিজি আছেন, যোগীজি আছেন, অমিতজি আছেন। সব জি-রা আছেন। ওদের সঙ্গে মানুষ নেই। তৃণমূলের সঙ্গে মানুষ আছে। তাই নন্দীগ্রামের মানুষ শপথ নিয়ে জানিয়ে দিয়েছে গদ্দার হঠাও নন্দীগ্রাম বাঁচাও।” এখানেই রাতে তাঁবুতে রাত কাটান অভিষেক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.