ছবি: সুশান্ত পাল।
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: সোমবার বীরভূমের ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election) থেকেও এই সমিতির সভাপতি নির্বাচন ঘিরে কার্যত টি-টোয়েন্টির মতো উত্তেজনা এলাকায়। কোথাও বিজয়ী তৃণমূল (TMC) প্রার্থীদের রিসর্টে এনে নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে। কোথাও সমিতির ভাবী সভাপতির জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) পোস্ট করে জনমত গঠনের চেষ্টা চলছে। দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীকে চাপে রাখতে সম্ভাব্য সভাপতিরা কোথাও বাজনা, সবুজ আবিরের বরাত দিয়ে রেখেছেন। এদিকে, দলের তরফে নামের তালিকা আসার আগেই ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ তা প্রকাশিত হতেই সতর্ক দল। রাজ্যের তরফে নামের তালিকা চারজন পদাধিকারীর কাছে পাঠিয়ে রাখা হল রবিবার রাতে।
উত্তর ভারতের রিসর্ট সংস্কৃতি (Resort Politics) আমদানি হয়ে গেল বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনেই! প্রথমে বিজেপি (BJP) উত্তর ভারতে এই সংস্কৃতি আমদানি করে। ঘোড়া কেনাবেচা রুখতে জয়ী প্রার্থীদের অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে রাখত তারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হতো কোনও বড় হোটেল বা রিসর্ট। এবার বঙ্গভূমেও সেটাই চলছে। বিজয়ী পঞ্চায়েত প্রার্থীদের ফল ঘোষণার পর থেকে সিউড়িতে (Suri) দলীয় দপ্তরে সঙ্গে জেলা আধিকারিকদের নিজেদের বাসায় রাখা হয়েছিল। বাইরে কালো কাপড় ঢেকে আড়াল করা। ঢুকেই অফিস সেক্রেটারির কাছে মোবাইল জমা দিতে হয়েছে। কিন্তু তাতেও সর্বত্র কর্মীদের আটকাতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু নলহাটি ১ ও ২ ব্লক, রামপুরহাট ২, ময়ূরেশ্বর ২ ব্লক-সহ বেশ কয়েক জায়গার তৃণমূলের বিজয়ী প্রার্থীদের তারাপীঠের বেশ কয়েকটি রিসর্টে রবিবার দুপুরের মধ্যে এনে হাজির করে দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে পাশের জেলা সাগরদিঘির কয়েকজনও হাজির হয়েছেন।
তারাপীঠের (Tarapith) ফুলিরডাঙার তৃণমূলের দলীয় দপ্তরের পিছনের লজে, বামাক্ষ্যাপার মূর্তির সামনে বিধায়কের লজে এবং আরও দুটি লজে তাঁদের হাজির করা হয়েছে। দুপুরে মাংস-ভাত, রাতে একসঙ্গে খানাপিনাও হয়েছে। দুপুরের পরে মুসলিম সদস্যরা তারাপীঠে ঘুরতে বেড়িয়েছিলেন, হিন্দুরা তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে সবাই রিসর্টে বন্দি। কারও কারও মোবাইলও জমা রেখে দিতে হয়েছে। এসবের কারণ একটাই, রবিবার সকাল থেকে নলহাটি এক ব্লকের বিদায়ী সমিতির সভাপতি আশাধন মালের নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) জনমত গঠন করার চেষ্টা চলে। লেখা হয়, ‘‘সুন্দর সুস্থ ব্লক পরিচালনার জন্য পুনরায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আশাধন মালকেই চাই।’’ অন্যদিকে, নলহাটি ২ ব্লকে বিরোধী দলের সঙ্গে যোগসাজশে শাসকদলের দুই সদস্য শীতলগ্রামের বান্দখালার এক বিরোধী দলের সদস্যকে সভাপতি করার জন্য রবিবার সকালেই রফা করেছে বলে দলের কাছে খবর এসেছে।
তাই দলের পক্ষ থেকে সতর্কতা হিসাবে সবাইকে একজোট করে ঘোড়া কেনাবেচা রুখতে রিসর্টে রাখা হয়েছে। এরই সঙ্গে পঞ্চায়েতের উদাহরণকে সামনে রেখে যাতে রাজ্য থেকে পাঠানো তালিকার বদল হয়ে না যায় তার জন্য চারজনকে একই তালিকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। কোর কমিটির আহ্বায়ক, সংশ্লিষ্ট ব্লক সভাপতি, এলাকার বিধায়ক ও ওই এলাকার গুরুত্বপূর্ণ নেতার কাছে
রবিবার রাত্রেই তালিকা পৌঁছে গিয়েছে। সোমবা সেই তালিকা প্রিন্ট করে ব্লক সভাপতি বিজয়ীদের হাতে মুখবন্ধ খামে দিয়ে দেওয়া হবে। বেলা ১২ টায় ব্লকে ব্লকে শপথের আগে বিজয়ীদের বাড়ি ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.