সুলয়া সিংহ ও শুভজিৎ মণ্ডল: ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে (lok Sabha Election 2019) তৃণমূল উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি যে এলাকায় সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছে সেটা হল জঙ্গলমহল এবং লাগোয়া জেলাগুলি। ২০১৬ পর্যন্ত যে আদিবাসী এবং তফসিলিরা রাজ্যের শাসকদলকে কার্যত একপেশেভাবে ভালবেসে এসেছে, কোনও এক জাদুমন্ত্রে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তারাই নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছে বিজেপিকে(BJP)। একুশের মহারণের আগেও তাই আদিবাসী এবং তফসিলি জাতি অধ্যুষিত দুই জেলা চিন্তা বাড়াচ্ছে তৃণমূলের। বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া দুই জেলাতেই কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে শাসকদলকে, এমনটাই উঠে এসেছে ঘাসফুলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায়।
বাঁকুড়া জেলা সেভাবে তৃণমূলের (TMC) শক্ত ঘাঁটি কোনওদিনই ছিল না। ২০১৬ সালে গোটা রাজ্যে যখন প্রবল মমতামুখী হাওয়া, তখনও এই জেলার ১২টি আসনের মধ্যে ৫টি দখল করেছিল বিরোধীরা। পরে অবশ্য বিরোধী শিবিরের একাধিক বিধায়ক শাসক শিবিরে ঝুঁকেছেন। আবার দলবদলের সুফল যে শুধু তৃণমূল একা পেয়েছে, তা নয়। বিজেপিও একইভাবে পরে তৃণমূল ভাঙিয়েছে এবং লোকসভা নির্বাচনে এসে বড়সড় সাফল্য পেয়েছে। ২০১৯ লোকসভার আগে সৌমিত্র খাঁকে তৃণমূল থেকে দলে টানাটা ছিল গেরুয়া শিবিরের মাস্টারস্ট্রোক। যে কারণে, তারা লোকসভায় বাঁকুড়ার দুটি আসনেই সাফল্য পেয়েছে। দুটি আসনেই তৃণমূলের থেকে বড় ব্যবধানে জিতেছে কেন্দ্রের শাসক দল। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো বাঘা নেতাও বাঁকুড়ায় গিয়ে জিতে আসতে পারেননি। এবারেও বাঁকুড়া জেলায় খুব একটা আশা দেখছে না তৃণমূল। ২০১৯ লোকসভার নিরিখে এই জেলার ১২টি আসনেই এগিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির। লোকসভার পর থেকে এই জেলার ভোটচিত্র তেমন বদলায়নি। তাই এবারেও জেলায় ২-৩টি আসন ছাড়া বাকিগুলিতে তেমন লড়াই দেওয়ার মতো জায়গায় নেই শাসকদল। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষাও সেকথাই বলছে। যদিও, শেষবেলায় সুজাতা খাঁর আগমনে খানিক আশার আলো দেখা গিয়েছে। কিন্তু এত কম সময়ে তিনিও কতদূর কী করতে পারবেন, তা নিয়ে ধন্দে দলেরই একাংশ। তারা ধরেই নিচ্ছে, বাঁকুড়ার বেশিরভাগ আসনেই হাসতে হাসতে জিতবে বিজেপি।
লোকসভায় পুরুলিয়ার চিত্রটাও অনেকটা বাঁকুড়ার মতোই ছিল। এই জেলার একমাত্র লোকসভা আসনে বিশাল ব্যবধানে জেতে বিজেপি। আসলে বাঁকুড়ার মতো এই জেলাতেও তফসিলি জাতি এবং উপজাতির ভোটার ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। আর গত কয়েক বছরে আদিবাসীদের মধ্যে ভাল সংগঠন গড়ে ফেলেছে আরএসএস, বজরং দল। স্বাভাবিকভাবেই বিধানসভাতেও লোকসভার মতো কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে শাসক শিবিরকে। তবে, তৃণমূল নেতারা আশাবাদী পুরুলিয়ার ফল অন্তত বাঁকুড়ার মতো হবে না। উলটে দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় এই জেলায় অভাবনীয় ফলাফল হওয়ার সম্ভাবনা উঠে এসেছে। তার কারণ হিসেবে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টর তুলে ধরছেন তারা। তৃণমূল নেতাদের দাবি, লোকসভার এই জেলায় খারাপ ফল হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যা দলনেত্রী মিটিয়ে ফেলেছেন। তাছাড়া, লোকসভার পর মমতা (Mamata Banerjee) তফসিলি এবং আদিবাসীদের জন্য যে ‘জয় বাংলা’ পেনশন প্রকল্প চালু করেছেন, তাও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তাছাড়া পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোটার আছেন, যারা এবছর বিজেপিকে আটকাতে তৃণমূলের সঙ্গ দেবেন বলে ধারণা শাসকদলের। সর্বোপরি, লোকসভায় জিতলেও এই এলাকায় বিজেপি তেমন নেতা তৈরি করতে পারেনি। আর সেটাই বিধানসভায় তৃণমূলের পক্ষে যাবে বলে দাবি দলের নেতাদের। ইন্টেলিজেন্স সূত্র অনুযায়ী, এই জেলার ৯টি আসনের মধ্যে ৮টিই নাকি যাবে তৃণমূলের দখলে। এমনটাই উঠে এসেছে দলের অন্দরের সমীক্ষায়। যদিও, লোকসভার হারের পর শাসকদলের নেতারাই এই পরিসংখ্যান নিয়ে সংশয়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.