Advertisement
Advertisement
TMC

শুদ্ধিকরণে কড়া তৃণমূল, ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ ৩ নেতা

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কড়া পদক্ষেপ তৃণমূলের।

TMC initiates drive against corruption, 3 leaders closed to Suvendu Adhikari arrested | Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী

Published by: Paramita Paul
  • Posted:December 29, 2022 10:09 am
  • Updated:December 29, 2022 10:09 am  

চঞ্চল প্রধান ও সৈকত মাইতি: দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান। নানা আর্থিক অভিযোগে এক প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর, এক পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন এক সভাপতি একই দিনে গ্রেপ্তার। বার্তা স্পষ্ট, স্বচ্ছতার প্রশ্নে দলে যতই প্রভাবশালী হোন না কেন, কাউকেই রেয়াত করা হবে না। পুলিশ সঠিক পদক্ষেপ করলে অভিযুক্ত নেতার পাশে থাকবে না দল।

তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ‌্যায় নিজে হলদিয়া ও কাঁথিতে জনসভায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে কোনও আপস করা হবে না। কাঁথির সভার দিনই অভিযোগ পেয়ে মারিশদার পঞ্চায়েত প্রধান-সহ তিনজনকে পদ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিষেক। তারপর হলদিয়ার বিভিন্ন কারখানায় ইউনিয়ন থেকে ঠিকাদারদের সরানো হয়েছে। এবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তিন নেতা, হলদিয়ার প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রশান্ত দাস, শান্তিপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সেলিম আলি এবং শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দিবাকর জানাকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। অভিষেকের নির্দেশে দল এভাবে একের পর এক ব‌্যবস্থা নেওয়ায় খুশি মানুষ।

Advertisement

[আরও পড়ুন: এক রাতে ৬ ডিগ্রি নামল কলকাতার পারদ, বছর শেষে ঠান্ডায় কাঁপছে তিলোত্তমা]

দলের সর্বভারতীয় সাদারণ সম্পাদকের উদ্যোগেই ‘এক ডাকে অভিষেক’ শুরু করা হয়েছিল সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ শোনার জন‌্য। সেখানে অভিযোগ এলে এবং প্রমাণিত হলে যে কড়া ব‌্যবস্থা নেওয়া হবে, তার প্রমাণ মঙ্গলবার শান্তিপুর ১ পঞ্চায়েত প্রধানকে পদত‌্যাগ করতে বলার পরদিনই গ্রেপ্তারির ঘটনায়। ঘটনাচক্রে তিন নেতারই উত্থান শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে। প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রশান্ত ও পঞ্চায়েত প্রধান সেলিমের তৃণমূলে যোগ সিপিএম থেকে। আর দিবাকরের একের পর এক আর্থিক দুর্নীতি, ব‌্যবসা, উল্কাসদৃশ উত্থানেও দল কোনও ব‌্যবস্থা নিতে পারত না শুভেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠ বলেই। তবে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যেতেই দিবাকরকে বহিষ্কার করা হয় তৃণমূল থেকে। শুভেন্দুবাবুর সঙ্গেই দিবাকরের স্ত্রী, জেলা পরিষদ সদস‌্য তনুশ্রী যোগ দেন বিজেপিতে। তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেছেন, ‘‘এই পদক্ষেপ স্বাগত। দলে স্বচ্ছতা ফিরুক। এতে মানুষের আস্থা বাড়বে। পঞ্চায়েত ভোটের ফল আরও ভাল হবে।’’

মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কাঁথির শ্মশান কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ঠিকাদার রামচন্দ্র পণ্ডাকেও। তিনি শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দুর ঘনিষ্ঠ। একদা দাপুটে সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠের ঘনিষ্ঠ, পরে শুভেন্দুর হাত ধরে ঘাসফুলে নাম লেখানো হলদিয়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর প্রশান্ত দাসের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে আগেও বিস্তর অভিযোগ ছিল। তিনি আবার হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের মামা। বুধবার স্থানীয় কুমারচকের বাসিন্দা জাহাঙ্গির হোসেন দুর্গাচক থানায় অভিযোগ করেন, তাঁকে চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষাধিক টাকা নিয়েছেন ওই নেতা। প্রতারিত আরও কয়েকজন। তারপর জিজ্ঞাসাবাদের জন‍্য প্রশান্তকে ডাকা হয়। জেরায় অসঙ্গতি ধরা পড়ে, বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তারপর গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। মহিষাদল পুলিশের সার্কেল ইন্সপেক্টর মানবেন্দ্র পাল জানান, ‘‘ধৃত প্রশান্ত দাসের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা হাতানোর অভিযোগ এসেছে। শুধু জাহাঙ্গির হোসেন না, চাকরি দেওয়ার নামে আট-দশ জন যুবকের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।’’

হলদিয়ার একটি কারখানায় করোনা পর্বে কাজের সময়ও শ্রমিকদের বেতনের ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ছিল তাঁর নামে। স্থানীয় মানুষকে সরিয়ে এখানকার কারখানায় বাইরের লোকজনকে অস্থায়ী শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ নিয়েও দলে অভিযোগ এসেছে বারবার। এদিকে শান্তিপুর ১ পঞ্চায়েত প্রধান সেলিমের নামে বেনামে বহু সম্পত্তি রয়েছে বলে ‘এক ডাকে অভিষেক’-এ অভিযোগ এসেছিল। দল গোপনে তদন্ত করে তার সত‌্যতা পায়। দেখা যায়, তাঁর প্রায় ৮০টি সম্পত্তি রয়েছে। কয়েক কোটি টাকার সেই সম্পত্তি যে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তা জানার পরই মঙ্গলবার তাঁকে পদত‌্যাগ করতে বলা হয় ও বুধবারই সেলিমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

[আরও পড়ুন: বয়ানে লাগাতার অসঙ্গতি, বাগনানে ভিনরাজ্যের ইউটিউবার খুনে গ্রেপ্তার স্বামী]

মেচেদার বল্লুক এলাকার বাসিন্দা দিবাকর জানা ওরফে লালুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে থাকাকালীন ডি এস এন্টারপ্রাইজ নামে একটি কোম্পানি খুলে ঠিকাদারি করতেন। আর সে সময়ই নিজের প্রভাব খাটিয়ে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোটি কোটি টাকার স্টোন বোল্ডার এলাকার উন্নয়নে রাস্তা তৈরির নামে হাতিয়ে নিয়েছিলেন। যা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বর্তমানে এই ব্লকেরই পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মন। অভিযোগ, সে সময় শুভেন্দু অধিকারীর ছত্রচ্ছায়ায় থাকার দরুন পার পেয়ে যান দিবাকর। পরবর্তী ক্ষেত্রে ২০২০ সাল নাগাদ এই কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেরই এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আর এই অভিযোগে দলও তাঁকে সাসপেন্ড করে। কয়েকদিন জেল খাটার পর জামিন পেয়ে কিছুদিন পর আবার দলে ফেরেন। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদানের পর গোপনে গেরুয়া শিবিরের হয়ে ভোট করানোর অভিযোগে বহিষ্কৃত হন দিবাকর। এরপর থেকে বিজেপিতে যোগদান না করলেও দলের কাজকর্ম অনেকটাই দেখতেন, কারণ স্ত্রী ততদিনে গেরুয়া শিবিরে। এবার দুর্নীতি মামলা-সহ একাধিক অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার অমরনাথ কে জানিয়েছেন, কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে পুরনো একটি মামলায় দিবাকর জানাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

 

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement