ফাইল ছবি।
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: অবিশ্বাস্য কামব্যাক। তৃণমূলের (TMC) ভোট শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী। বিজেপির (BJP) বাক্সে ধস। সরাসরি বিজেপির ভোট তৃণমূলে। বাম-কংগ্রেসের ভোট অনেকটা কমেছে। কার্যত সব হিসাব ওলটপালট। কিন্তু এর মধ্যে প্রশ্ন উঠে গেল ভোট শতাংশের হিসাব নিয়ে। ভোট শতাংশ বাড়ুক বা কমুক, শেষ পর্যন্ত বাম-কংগ্রেস ভোট কি পরস্পরের পকেটে গেল? পরস্পরের ভোট কি পরস্পরের দিকে ট্রান্সফার হল? কংগ্রেস নেতৃত্ব সরাসরি এখনই এ নিয়ে মন্তব্য করতে না চাইলেও দলের প্রার্থীদের এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। সিপিএম (CPM) বা বাম নেতৃত্ব মঙ্গলবারই সব হিসাব হাতে পায়নি। তবে তাদের নিজেদের ‘ডেডিকেটেড’ ভোট নির্দিষ্ট প্রার্থী পেয়েছেন বলেই দাবি বামফ্রন্টের। তবে গণহারে বাম সমর্থকদের ভোট মেলেনি বলে মনে করছে তারা।
২০১৯-এ তৃণমূলের সাকুল্যের ভোট শতাংশ ছিল ৪৪। এবার তাদের ৩ শতাংশ ভোট বেড়েছে বলে প্রাথমিক হিসাব সামনে এসেছে। বিজেপির ছিল ৪১ শতাংশ। তা ৩৭-এ পৌঁছেছে বলে জানা যাচ্ছে। এই হিসাবই বুথ ফেরত সমীক্ষায় ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়বে বলে দাবি করা হয়েছিল। অন্যদিকে, কংগ্রেসের ভোট ছিল প্রায় ৬ শতাংশ। তা ১ শতাংশ কমেছে বলে জানা যাচ্ছে। শুধু সিপিএমের ভোট আগেরবার ৫ শতাংশের কিছু বেশি ছিল। দুই দলের ভোট মিলিয়ে এবার ১৫ শতাংশ হবে বলে আশা করেছিল জোট। উলটে তা কমে গিয়েছে। যার লাভ গিয়েছে সরাসরি তৃণমূলের ঘরে। তবে ভোট গণনার ফল পুরোপুরি সামনে এলে শতাংশের হিসাবেও কিছু হেরফের হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কিন্তু পরস্পরের ভোট ট্রান্সফার? কলকাতা উত্তরের বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য পেয়েছেন ৮৭ হাজারের কিছু বেশি ভোট। এই কেন্দ্রে তাদের ভোট ছিল ৩ শতাংশের কাছে। তারা এবার পেয়েছে ২ শতাংশ ভোট। সিপিএমের ভোট ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। তবে তাদের মোট ১০ শতাংশ ভোটের সবটাই জোট প্রার্থী পেয়েছেন বলে দাবি সিপিএমের জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদারের। তবে এতে সন্তুষ্ট নন প্রদীপবাবু। তাঁর কথায়, “আমরা প্রচারে যা সাড়া পেয়েছিলাম, তার ফলাফল ভোটে দেখলাম না। যৌথ নেতৃত্ব আলোচনায় বসব।” কল্লোলবাবুর কথায়, “ভোট ট্রান্সফার ঠিকই হয়েছে। তবে গণ সমর্থন আসেনি।” যার ব্যাখ্যায় প্রদীপবাবু বলছেন, “একটা জিনিস হয়ে থাকতে পারে। মানুষ হয়তো ধরে নিয়েছে ইন্ডিয়া জোটে সিপিএম, কংগ্রেসও আছে। আবার তৃণমূলও আছে। কিন্তু তারা বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে।”
দক্ষিণ কলকাতায় সিপিএমই প্রার্থী দিয়েছিল। সেখানে তাদের ভোট ছিল ১৩ শতাংশ। কিন্তু তার মধ্যে সাড়ে ১১ শতাংশ ভোট তাদের প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম পেয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনায় ভোট ট্রান্সফারের আরও করুণ অবস্থা বলে জানাচ্ছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তাপস মজুমদার। সেখানে গণ সমর্থন তো দূর, দলের ভোটই ঠিকমতো একজোট করা যায়নি এবং তা ট্রান্সফারও করা যায়নি বলে মত জেলা নেতৃত্বের। পুরুলিয়ায় কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোরও একই আক্ষেপ। তাঁদের অংশের সম্পূর্ণ ভোট দল পেয়েছে বলেই মনে করছেন তিনি। কিন্তু বামেদের ভোট পকেটে আসেনি বলে প্রাথমিকভাবে তাঁর মনে হয়েছে। তবে ২৫ শতাংশের আশপাশের কুড়মি ভোট সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে মনে করছে জেলা নেতৃত্ব। তবে কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ এত সহজ হিসাবে যেতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “ভোট ট্রান্সফার নিশ্চয়ই হয়েছে। আমরা হেরেছি বলেই কারও উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া যায় না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.