সৌরভ মাজি, বর্ধমান: প্রশাসনিক বৈঠকে বিধায়কদের কাছে এলাকার খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নেতাদের নাম করে জানতে চেয়েছিলেন, কোনও গোলমাল চলছে কি না৷ মুখ্যমন্ত্রীর ভয়ে সকলেই জানিয়েছিলেন, ‘সব ঠিক আছে দিদি!’ কিন্তু, শুক্রবার কালনার সভা সেরে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা ফিরতেই শনিবার ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল পূর্ব বর্ধমানের গলসি। ঘাঘড়া গ্রামে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদে মুহুর্মূহু বোমাবর্ষণ হল। চলে গুলি। ঘটনায় দুই পক্ষের কম করে ১০ জন জখম হন। এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি, গাড়ি ভাঙচুরও করা হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে, এদিনের এই ঘটনার এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক অবশ্য দাবি করেছেন, কোনও গুলি চলেনি। মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। গলসির তৃণমূল বিধায়ক অলোক মাজি জানিয়েছে, ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে পুলিশকে। তিনি সাফ বলেছেন, ‘‘যারা মারামারি করবে, তারা দলের কেউ নয়।’’
সম্প্রতি, গলসির বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদ চরমে ওঠে। হামলা-পাল্টা হামলায় বারবার উত্তপ্ত হয়েছে বিভিন্ন গ্রাম। তৃণমূলের গলসি-১ ব্লক সভাপতি শেখ জাকির হোসেন বনাম ব্লকের কার্যকরী সভাপতি ওমর ফারুক গোষ্ঠীর বিবাদ এখন সর্বজনবিদিত। অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যায় শেখ আবু সালাম নামে ফারুক গোষ্ঠীর এক যুবককে জাকিরের গোষ্ঠীর লোকজন মারধর করে। পরিবারের লোকজনের দাবি, বাইক নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় জাকির গোষ্ঠীর বকুল শেখ, শেখ শান্ত, শেখ মেহেবুব মণ্ডল, সাইদার মণ্ডলের নেতৃত্বে হামলা হয়। মেরে সালামের দুই পা ভেঙে দেওয়া হয়। তাঁকে প্রথমে পুরষা ব্লক হাসপাতালে ও পরে বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ করেন সালামের ভাই শেখ ওসমান। রাতেও ব্যাপক গোলমাল চলে গ্রামে।
[অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ জঙ্গলমহলের মাওবাদী নেতা বিক্রম]
এদিন সকালে ফের উত্তেজনা ছড়ায় গ্রামে। অভিযোগ, বকুলের নেতৃত্বে এদিন সালামদের বাড়িতে চড়াও হয় একদল দুষ্কৃতী। ব্যাপক বোমাবাজি হয়। গুলিও ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। একটি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। সালামদের বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। বোমার আঘাতে জখম হয়েছেন সালামের দুই কাকা-সহ সাতজন। সালামের ভাই শেখ ওসমান, শেখ দেলোয়ারা, কাকা শেখ সবুর, শেখ হুদাই, শেখ হায়দর ও রহমত মোল্লা গুরুতর জখম হয়েছেন। শেখ ওসমান জানান, এদিন সকালে সালামের চিকিৎসার ব্যাপের পরিবারের লোকজন যখন আলোচনা করছিলেন, তখনই হামলা করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, কয়েক মিনিটের মধ্যে কম করে ৫০টি বোমা ফাটানো হয়েছে। শেখ ওসমান জানান, তাঁরা দৌড়ে পাশের একটি ঘরে আশ্রয় নেওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। এদিন গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সুতলি বোমার অংশ বিশেষ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাড়ির ছাদে, দেওয়ালে বোমার আঘাতের চিহ্ন দেখা গিয়েছে৷ তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি ফারুক অভিযোগ করেন, ব্লক সভাপতি লোকজনের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করাই মারধর করা হয়েছে৷ যদিও ব্লক সভাপতির দাবি, গ্রাম্য বিবাদে এই ঘটনা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.