ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কোন বুথে কত ভোট পড়ল। বিজেপিই বা কত ভোট পেল আসন পিছু? পাঁচ দফা নির্বাচন শেষে চুপচাপ সেই হিসাব কষতে বসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাঁচ দফা নির্বাচন শেষ। উত্তরবঙ্গের পর দক্ষিণবঙ্গের একটা বড় অংশের ভোট হয়ে গিয়েছে। বাকি আছে দক্ষিণবঙ্গের শেষ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশের ভোট। তার উত্তাপ হার মানাচ্ছে চামড়া পোড়া গরমকেও। এই পরিস্থিতিতেই গোটা রাজ্যের ভোটকে সব মিলিয়ে তিন ভাগে ভাগ করে নিয়েছে তৃণমূল। লড়াই মূলত তাদের সঙ্গে বিজেপির। গেরুয়া শিবিরের দাবি, বাংলায় তাদের এবার শুধু ভোট শতাংশে বাড়বে তাই নয়, বেশ কয়েকটি আসনও বাড়বে। কারণ কেন্দ্রের দৌলতে হলেও রাজ্যে তাদের প্রবল হাওয়া। তৃণমূল সেসব দাবি উড়িয়ে পালটা দাবি করেছে, বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ তাদের টার্গেট। সেই টার্গেট নিয়েই তারা লড়ছে। কোনওভাবেই তার একটাও কম হতে দেওয়া যাবে না।
কিন্তু লক্ষ্য এক থাকলেও, বাস্তবের ছবিটা ভিন্ন হতেও পারে। তাই কোন ফুলে কত ভোট পড়ল তার হিসেব কষে রাখতেই হবে। ইতিমধ্যে দফায় দফায় ভোটের রিপোর্ট নিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পর্বে কোনও ফাঁক রাখতে চায় না তাঁর দলও। যেখানে সব ক’টি আসন পাওয়ার দাবি করা হয়েছে, সেখানে আদৌ ভোটের ফলাফল কী, অন্য দলগুলিরই বা কী হাল হবে, তার হকিকত ইতিমধ্যে এক দফা কষে ফেলেছে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গের আসনগুলি নিয়ে তৃণমূলের দৃঢ় বিশ্বাস, তারা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক আসন সেখান থেকে জিতবে। তবে এই আসনগুলিতেই বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। উত্তরবঙ্গ নেতৃত্ব রিপোর্ট দিয়েছে, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে তারা অনায়াস জয় পাবে। বিজেপি এইসব আসনে টাকা ছড়িয়ে কিছু ষড়যন্ত্র করলেও ভোটের মুখে পরিস্থিতি তারা আয়ত্তে নিয়ে আসে বলে দাবি তৃণমূলের।
দার্জিলিং, দুই দিনাজপুরে বিজেপি লড়াই করার মতো পরিস্থিতিতে ছিল। দার্জিলিংয়ে বিমল গুরুং অনুগামীরা বিজেপিকে মদত দিয়েছে। বিজেপির সূত্র যদিও গোটা উত্তরবঙ্গ নিয়েই আশাবাদী। এমনকী, মালদহে ভোট কাটাকাটির ফলও বিজেপি পেতে পারে বলে আশা করেছে। মুর্শিদাবাদ নিয়ে বিজেপি কোনও মন্তব্য করছে না। সেখানে লড়াই সরাসরি অধীর চৌধুরির সঙ্গে তৃণমূলের। তবে শাসকদলই এই জেলায় সন্তোষজনক পরিস্থিতিতে আছে বলে দাবি তাদের।
নবাবের রাজধানী পার করলে একদিকে বীরভূম ও বর্ধমান, অন্যদিকে নদিয়া। এই তিন জেলাতেই শাসকদল তাদের ভোটব্যাংকে কাউকে দাঁত ফোটাতে দেয়নি বলে খবর। নেতৃত্ব জানাচ্ছে, বুথে বিজেপির এজেন্ট দূর অস্ত, এই জেলাগুলিতে বিজেপি মিছিলের লোক জোগাড় করতে হিমশিম খেয়েছে। অভিযোগ যাও লোক জোগাড় করেছে তার অধিকাংশই অর্থের বিনিময়ে। ভোটের দিন আসানসোলের বিদায়ী সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় আর বহরমপুরের বিদায়ী সাংসদ অধীর চৌধুরির অবস্থা সকলেই দেখেছে। বুথে ছাপ্পা চলছে, এই অভিযোগে কার্যত একা তাঁদের পড়িমরি করে ছুটে বেড়াতে দেখেছে গোটা রাজ্য। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের কথায়, “বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি বিজেপি বা কংগ্রেস কেউই। সংগঠন বলে কিছু নেই। দলে মিছিল করার লোক নেই। শুধু কি নরেন্দ্র মোদি-হাওয়ায় ভোট হয়?”
অন্যদিকে, বীরভূম, নদিয়া, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার যে অংশে ভোট হয়ে গিয়েছে, সেখানকার নেতৃত্ব কী বলছে? প্রত্যেকে কার্যত একযোগে জানিয়েছে, আসনপিছু ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বুথে এজেন্ট দিতে পেরেছিল বিজেপি। তা-ও বেলা বারোটার পর তাদের টিকি দেখা যায়নি। কিন্তু কাউকে উঠে যেতে, বুথ ছেড়ে যেতে কেউ হুমকি দেয়নি বলে দাবি তৃণমূলের। তাদের কথায়, “প্রত্যেকে তাদের ভোট দিয়েছেন। কাউকে উসকে, বিজেপির মতো কাউকে চমকে ভোট দিতে বলা হয়নি। আমরা শান্তিতে ভোট চেয়েছি। শুধু বুথে নিজেদের এজেন্টদের হিসাব রেখেছি।” উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বের কথায়, “যে ক’জনকে বুথে বসতে দেখা গিয়েছে, তাদের মাথাপিছু ৬০০ টাকা করে দিয়েছে বিজেপি।”কিন্তু কোন আসন কে জিতবে, বা কোথায় কত ভোটের ব্যবধান হবে, তার হিসাব? বুথফেরত হিসাব নিয়ে রাখলেও তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূল। তাদের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আমরা ২৩ তারিখ বিকেলে সব বলব। এখন চুপ করে বসে হিসাব মেলানোর পালা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.